মানিকগঞ্জে কলেজছাত্র আরিফ হোসেন (২৫) হত্যা মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০০৫ সালে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ২০০৬ সালে পুলিশের চার্জশিটে এই দুজনসহ সব আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। হত্যার দীর্ঘ ১৭ বছর পর রবিবার (১২ জুন) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক উৎপল ভট্টাচার্য্য আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছেন বিচারক। নিহত আরিফ হোসেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের কাকনা এলাকার শুকুর আলীর ছেলে। তিনি মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের (অনার্স) বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের কাকনা এলাকার মাইনুদ্দিনের ছেলে মো. লিংকন (৪০) ও একই এলাকার স্বরুপ আলীর ছেলে আলতাফ হোসেন (৪০)। খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- হাসান আলী, মঞ্জু, সোহন, মাইনুদ্দিন, রাসেল ও বাদলকে খালাস দেন। মামলা চলাকালে অপর আসামি জিন্নাত আলী মৃত্যুবরণ করায় তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মথুরনাথ রায়ের বিবরণ দিয়ে জানান, ২০০৫ সালের ২৭ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আরিফকে শত্রুতার জেরে হত্যা করে ও লাশ ছিলামপুর সেতুর নিচে কচুরিপানায় লুকিয়ে রাখে। পরে আসামিদের চাপ দিলে তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়। ঘটনার দুই দিন পর পুলিশ ছিলামপুর সেতুর নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করে। এই ঘটনায় নিহতের বাবা শুকুর আলী বাদী হয়ে লিংকন, আলতাফ, হাসান আলী, মঞ্জু, সহন, মাইনুদ্দিন, রাসেল, বাদল ও জিন্নাত আলীকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। ২০০৬ সালের ৩ মার্চ আদালতে চার্জশিট জমা দেয় দৌলতপুর থানা পুলিশ। চার্জশিটে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এতে বাদীপক্ষের নারাজি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আলম খলিফা। তদন্তে আসামিদের আবারও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর ২০০৬ সালের ৩১ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়।
তিনি আরও জানান, মামলায় ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি লিংকন ও আলতাফ দোষী প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় ছয় জনকে খালাস দেন। মামলা চলাকালে অপর আসামি জিন্নাত আলী মৃত্যুবরণ করলে তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মথুরনাথ সরকার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী আরিফ হোসেন লিটন এবং হুমায়ন কবির সেন্টু উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান।