X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

প্রশংসাপত্রের জন্য খরচ ২০ টাকা, আদায় ৪৫০  

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
০৮ আগস্ট ২০২২, ১৯:৪৭আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১৯:৫৪

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ‘বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মূল সনদ ও মার্কশিট (ট্রান্সক্রিপ্ট) প্রতি দু’বার করে ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচে তৈরি প্রশংসাপত্রের বিপরীতে জন্য ৪৫০ টাকা আদায় করারও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, সব শিক্ষার্থীর সনদপত্র ও মার্কসিটের (ট্রান্সক্রিপ্ট) ফি বোর্ড পরীক্ষার পূর্বে ফরম পূরণের সময়ে আদায় করা হয়। এদিকে দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টিকে অপরাধ বলছেন অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।  

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সনদপত্র বাবদ ১০০ টাকা ফি, মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র বাবদ ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু প্রশংসাপত্রের ফি দাঁড়ায় ৪৫০ টাকা। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৪১০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। একই বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২০৬ জন শিক্ষার্থী। এ হিসেবে এসএসসির ৪১০ জন শিক্ষার্থীর থেকে মোট দুই লাখ ৪৬ হাজার টাকা ও এইচএসসির ২০৬ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা আদায় হবে।

প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. ইশতিয়াক হোসেন অভিযোগ করেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসির প্রশংসাপত্র ও মার্কশিটের জন্য ফি বাবদ ৫০০ টাকা করে মোট এক হাজার টাকা আদায় করেছেন। এছাড়াও সার্টিফিকেট (মূল সনদপত্র) বাবদ ১০০ টাকা আদায় হয়েছে। এটা জুলুম ও অন্যায়।’

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে বাংলা ট্রিবিউন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষার আগে আবেদনফরম পূরণ করা হয়। সে সময় বোর্ড ফি আদায় করা হয়। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া এসএসসি-২০২২ সালের ফরম পূরণের তথ্য অনুযায়ী বোর্ড ফি’র মধ্যে মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা এবং ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) বাবদ ৩৫ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বোর্ড ফি’র সঙ্গে ফরম পূরণের সময়েই আদায় হয়। একইভাবে এইচএসসি-২০২২ সালের ফরম পূরণের তথ্য অনুযায়ী মূল সনদ বাবদ ১০০ টাকা ও ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) বাবদ ৫০ টাকা বোর্ড ফি’র সঙ্গে যুক্ত। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট গ্রহণ করতে পুনরায় ফি আদায় করা হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, প্রশংসাপত্র বাবদ ১৮ থেকে ২০ টাকা সর্বোচ্চ খরচ হয়। যিনি প্রশংসাপত্র তৈরির কাজ করেন তাকে প্রতি প্রশংসাপত্র বাবদ ১১ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। এছাড়া কাগজ ও কালি বাবদ আরও সাত থেকে ৯ টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে এর খরচ দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২০ টাকা।

এসব নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট (মার্কশিট) ও প্রশংসাপত্র নিতে শিক্ষার্থীদের ফি দিতে হচ্ছে, এটা সত্য। তবে এই ফি আদায়ের নিয়ম অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা হয়।’ 

বোর্ড ফি এর সাথে এসব ফি আগেই আদায় করা হয়েছে। পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেন আদায় করা হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন. ‘অনেক আগে থেকে এসব চলছে। বিগত সময়ের কমিটি যা নির্ধারণ করেছে সেই অনুযায়ী চলছে। আমি কোনও নিয়ম পরিবর্তন করিনি। আমি খুব অল্প সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি, ২০২১ সালের শুরুতে যোগদান করেছি। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ বদরুজ্জামান স্যারের সময় থেকে এই সিস্টেমে ফি আদায় হচ্ছে। ওই সময় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান। আমি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে এভাবেই ফি আদায় করতে দেখছি।’ 

শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ টাকা খরচে তৈরি প্রশংসাপত্রের জন্য ৪৫০ টাকা আদায় করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশংসাপত্র তৈরি করতে ২০ টাকা খরচ হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক বড়। এখানে অনেক খরচ হয়। এছাড়া অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর অর্ধেক বেতন মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালে আর্থিকভাবে সমস্যার মধ্যে ছিলাম। আদায় হওয়া টাকা এসব ক্ষতি পোষাতে খরচ হবে।’ 

এদিকে বোর্ড ফি’র পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফি আদায় করার কোনও নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার আগে বোর্ড ফি’র সঙ্গেই সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের টাকা আদায় হয়। এরপরে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। আর প্রশংসাপত্র বাবদ কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায় করে থাকে। তবে এটারও নিয়ম নেই। কারণ বিবিধ ও উন্নয়ন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা আদায় হয়। তাহলে কেন টাকা নেবে প্রতিষ্ঠানগুলো,’ প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের টাকা বোর্ড ফি’র সঙ্গেই আদায় হয়, এটা পুনরায় আদায় করার কোনও নিয়ম নেই। বোর্ড ফি নির্ধারণ করা আছে, এরপর যদি কেউ ফি আদায় করে সেটা অবৈধ।’
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বোর্ড টাকা নেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় কেন টাকা নেবে? এই ধরনের অনিয়ম চলতে দেওয়া যায় না। বিষয়টা খতিয়ে দেখে ব্যভস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধী নেতা লিখলেন ‘পদ ছেড়েছি প্রেম নয়’
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেলো পাকিস্তান
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেলো পাকিস্তান
মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড
মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লবের সাত দিনের রিমান্ড
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি