বাজারে মুরগির মাংস-ডিমের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকার পরেও কোনও আয় নেই রাজবাড়ী মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের। সরকারি উদ্যোগে ১৯৮২ সালে ৯ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত খামারটিতে রয়েছে মুরগি পালন ও প্রজননের একাধিক শেড। কর্মীদের জন্য রয়েছে প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন। রয়েছেন পর্যাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীও। তাদের বেতনও হচ্ছে নিয়মিত। কেবল খামারে নেই কোনও মুরগি, নেই মাংস ও ডিমের উৎপাদন।
সম্প্রতি সরেজমিন জেলার সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
এ নিয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮২ সালে রাজবাড়ী জেলার প্রাণকেন্দ্র ভবানীপুরে মহাসড়কের পাশে ৯ বিঘা জমির ওপর চারটি শেড নিয়ে যাত্রা শুরু করে খামারটি। সরকারি এই খামারে প্রশাসনিক ভবন, ব্যবস্থাপকের বাসভবন, অতিথি কক্ষ, বিক্রয় কেন্দ্রসহ রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক আবাসিক ভবন।
তবে খামার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য শেডগুলোতে কোনও মুরগি নেই। অকেজো হয়ে পড়ে থাকা শেডগুলোর টিন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ভবনের চারপাশে জমেছে ময়লা-আবর্জনায় স্তূপ, দেয়ালগুলোতেও শেওলা ধরেছে। আবাসিক ভবন ও অতিথি কক্ষ দেখে মনে হয় বছরের পর বছর তালা খোলা হয় না। মুরগির খাবারের জন্য গোডাউন ভর্তি রয়েছে অনেক খাবার, তবে জানালাগুলো খুলে খুলে পড়ছে। কক্ষের মধ্যে রাখা মুরগির ফিড নষ্ট হচ্ছে। সবমিলে এক ভুতুড়ে পরিবেশ।
খামারের এ অবস্থা কেন, জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাজবাড়ী সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের গেটের পাশে অবস্থিত চায়ের দোকানদার মনির হোসেন বলেন, এই খামারে কত বছর হাঁস-মুরগি উৎপাদন হয় না, সেটা মনে নেই। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে। সকাল-বিকাল শুধু অফিস খোলা হয় দেখি, তবে কর্মীরা অফিসে বসে কি যে করেন, তা বলতে পারবো না।
স্থানীয় পলাশ নামের এক যুবক বলেন, সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের নামে বাসস্ট্যান্ডের নাম হয়েছে “মুরগির ফার্ম”। তবে ফার্মে বর্তমানে হাঁস-মুরগি লালন-পালন বন্ধ রয়েছে। ফার্মের ভেতরে জঙ্গল হয়ে পড়েছে। এই অকেজো মুরগি ফার্মটি জেলাবাসীর কোনও কাজে আসছে না।
জেলার একাধিক ক্ষুদ্র খামারি অভিযোগ করেন, রাজবাড়ীতে নামে মাত্র একটি সরকারি হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। এই খামার এলাকাবাসী ও খামারিদের কোনও উপকারে আসে না। তবে খামারটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হলে জেলার ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো বলে জানান তারা।
মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, ১৯৮২ সালে জেলায় হাঁস-মুরগির ফার্ম স্থাপন করা হয়। তবে পুরনো মডেলের শেডগুলো বিকল হয়ে গেছে। সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটির আধুনিকায়নে ২৭ কোটি টাকার একটি চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আধুনিকায়ন কাজ হলে এখানে হ্যাচারিও করা হবে। তখন জেলার ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, আমিসহ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সাত জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছি। কাজ না থাকায় আমাদের অলস সময় কাটাতে হয়।