‘উঠান ভরা লাউ-শসা, ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা’। খনার বচনের লাউয়ের বন্দনার প্রমাণ মিলেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের চাষি শামসুল হকের বেলায়। বছরব্যাপী অন্যের জমিতে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার ৪০ হাজার খরচ করে লাউ চাষ করে দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত অন্তত তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার।
পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী শামসুন্নাহার। প্রতিটি লাউ আকারভেদে ৭০-৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন তিনি।
চাষি শামসুল হক বলেন, ‘লাউ চাষের প্রক্রিয়া জানতে আমাকে কারও কাছে যেতে হয়নি। তিন বছর আগে একবার লাউ চাষ করেছিলেন। তখন করোনার কারণে বেশি লাভ হয়নি। এবার লাউয়ের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি, তিন লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবো।’
শামসুল হকের স্ত্রী শামসুন্নাহার বলেন, ‘উৎপাদন খরচের চেয়ে কাজের লোকের মজুরি বেশি। কাজের লোক নিতে গেলে অনেক টাকা লাগে। তাই কাজের লোক না নিয়ে নিজেরাই জমিতে কাজ করে শ্রমিকের টাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মাথায় ফলন পেয়েছি। স্থানীয় বাজারে লাউ বিক্রি করে ভালো আয় পেয়ে আমরা খুশি।’
প্রতিবেশী চাষি শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অন্যান্য শাকসবজির পাশাপাশি এবার লাউ চাষ করেছি। গত দুই বছর করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। ওই দুই বছর উৎপাদন খরচও উঠেনি। এবার ভালো ফলন হয়েছে। আমি লাউ বিক্রি শুরু করেছি। আশা করছি লাভ হবে।’
একই এলাকার জসীম উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন লাউ বিক্রি করছি। এলাকার টেংরা, তেলিহাটি, টেপিরবাড়ি এবং আনসার টেপিরবাড়িতে নিয়মিত লাউ বিক্রি করি। আশপাশের চাষিরা আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।’
ওই গ্রামের চাষি আব্দুল বাতেন বলেন, ‘শামসুল হক ভাইয়ের চাষাবাদ দেখে এবার লাউয়ের আবাদ করেছি। ফলন পেতে শুরু করেছি। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। লাভবান হওয়ার আশা করছি।’
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আইনুল হক বলেন, ‘শামসুল হক সফল চাষি। মৌসুুমি ফল ও শাকসবজি চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। লাউ চাষে তিনি সবচেয়ে সফল। তার লাউ চাষ দেখে এলাকার আব্দুল বাতেন, নূূরুল হক ও ফজলুল হকসহ অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’