X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এমপির ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ১২ ঘণ্টা থানায় বসেছিল কিশোরী

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৫৩আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪২

টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে এক কিশোরী। ভুক্তভোগীর দাবি, অভিযোগ নিয়ে বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ২টায় থানায় গেলেও দফায় দফায় অভিযুক্তের সমাধানের প্রস্তাব ও পুলিশের গড়িমসিতে ১২ ঘণ্টা পর রাত ২টায় মামলা রেকর্ড করা হয়। দীর্ঘ সময় তাকে থানায় বসিয়ে রেখেছে পুলিশ।

তবে পুলিশ বলছে, ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে মামলা নিতে দেরি হয়েছে। রাত হয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগীকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। 

বাংলা ট্রিবিউনকে ওই কিশোরী জানায়, ‘বুধবার দুপুর ২টার দিকে থানায় মামলা করতে গেলে বড় মনির প্রভাবশালী হওয়ায় দফায় দফায় বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রস্তাব দেয়। পুলিশও মামলা নিতে গড়িমসি করে। একপর্যায়ে রাত ২টার দিকে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।’ মামলার পর থেকে ওই কিশোরী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবি করেছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়েটা এসে অভিযোগ দেওয়ার পর আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে মামলা নিয়েছি। মামলা হওয়ার পর সে তো থানায় থাকবে, তাকে আমরা মেডিক্যালে পাঠাবো না? মামলা হওয়ার পর সে থাকতে চাচ্ছিল না, চলে যেতে চাচ্ছিল। কোনও ভিকটিম বা তার হয়ে যদি কেউ মামলা করে তাহলে তাকে মেডিক্যালে পাঠানো পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে থাকতে হয়।’

ওই কিশোরীর অভিযোগ মামলা নিতে ১২ ঘণ্টা দেরি করেছে পুলিশ এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘তাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়নি। রাতের বেলায় তো হাসপাতালে পাঠানো যায় না। সে দুপুরে এসেছে দাবি করলেও আমার সঙ্গে কথা হয়েছে বিকালে। কোনও লোক যদি দুপুরে এসে থানার বাইরে ঘোরাঘুরি করে, আমরা এর দায় নেবো না। তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পাঠানোর মতো ব্যবস্থা ছিল না। তবে ভুক্তভোগীকে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠানোর আগ পর্যন্ত থানা হেফাজতে থাকবে, সেটা আট ঘণ্টা হোক কিংবা ১০ ঘণ্টা হোক। তার সঙ্গে কেউ ছিল না। পরে তার ফুফু এলে তার সঙ্গে কথা বলে ভুক্তভোগীকে থানায় রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে পাঠানোর পর তার নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা সেফ কাস্টডিতে রাখার আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তার ফুফুর জিম্মায় দিয়েছেন।’

মামলা নিতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেহেতু সে ভিকটিম, তাকে রাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। সকালে হাসপাতালে এরপর আদালতে নেওয়া হয়েছে। রাত ২টায় নয়, ১০টায় মামলা হয়েছে।’

ভুক্তভোগীকে থানায় এত ঘণ্টা বসিয়ে রাখার বিষয়ে আইন কী বলে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর আলী খান বলেন, ‘মামলার কাগজপত্র না দেখে বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে মামলা নিতে এত সময় কেন লেগেছে, তা পুলিশকে জানাতে হবে।’

থানা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ২টার দিকে টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করে ওই কিশোরী। মামলায় বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় কিশোরীর। ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার জন্য বড় মনিরের সহযোগিতা চায়। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাসায় ডেকে নেন। পরে কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন বড় মনির। পরে ছবি দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করে। একইভাবে কয়েকবার ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে কিশোরী। পরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন বড় মনির।

কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে শহরের আদালতপাড়ায় নিজের শ্বশুরবাড়িতে কিশোরীকে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন। এবারও রাজি না হওয়ায় ওই বাসার এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে আবার ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর অভিযুক্তের স্ত্রী নিগার আফতাব কিশোরীকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী। ওই দিন রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হতো। তাদের ভয়ে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেছে কিশোরী। মামলার পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে তার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। এরপর জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

তবে গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের ছোট ভাই টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বলেন, ‘আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মেয়েটি এমন অভিযোগ করেছে। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির আশ্রয় নিয়ে টাকার লোভে মামলাটি করেছে। সামনে জেলা যুবলীগের সম্মেলন। সম্মেলনে প্রার্থী হবেন আমার বড় ভাই। সামনে নির্বাচন, খুব কৌশলে কাজটি করা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ওই কিশোরী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে প্রাথমিক নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে সোয়াব টেস্ট করা হবে। এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।’ 

/এফআর/
সম্পর্কিত
অরাজনৈতিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশসিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজনৈতিক মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
বগুড়ায় নির্বাচনি ক্যাম্পে আ.লীগ কর্মীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ, থানায় মামলা
সর্বশেষ খবর
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
রাঙামাটির দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম
রাঙামাটির দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে নির্বাচনি সরঞ্জাম
রাতের আঁধারে ২৪ লাখ টাকা ও ১১ সহযোগীসহ নির্বাচনের প্রার্থী আটক
রাতের আঁধারে ২৪ লাখ টাকা ও ১১ সহযোগীসহ নির্বাচনের প্রার্থী আটক
কাজাখস্তানের নারী দাবাড়ুকে  হারিয়ে প্রথম জয় ফাহাদের
কাজাখস্তানের নারী দাবাড়ুকে  হারিয়ে প্রথম জয় ফাহাদের
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র