দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে পাঁচটি সংসদীয় আসনে ৯৩৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বা ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব কেন্দ্রের বিষয়ে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ভোটাররা বলছেন, দেশের অন্যান্য জায়গায় নির্বাচনি আমেজ যেমনই হোক, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে গাজীপুরের অধিকাংশ আসনেই নির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের প্রত্যেক আসনেই ভোটারের বড় একটি অংশ পোশাকশ্রমিক। প্রার্থীরাও মনে করছেন, শ্রমিকরা যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী সংসদ সদস্য কে হবেন তা নির্ধারণের চাবিকাঠি বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের হাতে, দাবি শ্রমিক নেতাদের। তবে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ আছে তাদের। তা ছাড়া গাজীপুরে ভোটারদের বড় একটি অংশ নারী। এই নির্বাচনে গাজীপুরে কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা দেখা গেছে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে নারী ও নতুন ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
শ্রীপুরের বারতোপা এলাকার নতুন ভোটার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই বলছেন ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা হতে পারে। প্রথমবার ভোট দেবো। এটা যেমন আনন্দের তেমনি ভয়ও কাজ করছে। পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবো।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও গাসিকের একাংশ) আসনে ১২৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৮২টি, যা মোট কেন্দ্রের ৬৪ শতাংশ। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল ফজল মো নাসিম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, বিডিআরসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
গাজীপুর-২ (সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড) নিয়ে গঠিত এ আসন। এ আসনের ৪০০ ভোটকেন্দ্রের ২৯৭টি অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র টঙ্গী, আউচপাড়া, এরশাদনগর। টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘টঙ্গী এলাকায় যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ গ্রহণ করা হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে।’
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গাজীপুর-৩ আসনে ১৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৯০টি ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্র ভাওয়ালগড়, পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়নে। এ আসনের সব কটি ভোটকেন্দ্রকে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরে রেখেছে।’
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের ১২২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৭২টি। গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ, সিটির তিনটি ওয়ার্ড ও বাড়িয়া ইউনিয়ন) আসনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০৫টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪টি।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী সফিকুল আলম বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দলসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাজীপুরে ৫টি আসনের ৯৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। সব কটি কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। জেলার পাঁচটি নির্বাচনি আসনে অর্ধেকের বেশি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা করা প্রয়োজন, আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছি।’