আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট করার সময় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের ৭ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এদিকে গাজী টায়ার কারখানার ভবনের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে আবারও রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানার বিভিন্ন মালামাল লুট করা শুরু হয়। এ সময় ৭ জনকে আটক করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রূপগঞ্জের পাড়াগাঁও এলাকার মোতাবর হোসেনের ছেলে আব্দুস সাত্তার (২২), খাদুন এলাকার ফজলুল হকের ছেলে খোরশেদ আলম (২১), তাদির ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম (২৫), আতাবর রহমানের ছেলে মাহবুব হোসেন (৩৫), তারাব এলাকার আলেব শেখের ছেলে সিরাজ (৩২), মোগড়াকুল এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোতালিব (৪৮) ও আব্দুর রশিদের ছেলে সুমন (৩০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকে (রবিবার) কারখানা থেকে লুটপাট করার সময় সাত জনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।’
আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারখানার তদন্ত টিমের প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার চোখে দৃশ্যমান যা পেয়েছি সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন তদন্ত কমিটির প্রধানকে দিয়েছি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের এখনও চূড়ান্ত তালিকা করা হয়নি।’
তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার জন্য আজকে মিটিং হয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা। আমরা আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দিতে পারবো।’
এর আগে, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত গাজী টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে লোহার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ লুট করতে থাকে। পরে তারা কারখানার ভেতরে ওয়েস্টেজ সেকশনে আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগে। দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কথা জানালেও ফের দফায় দফায় ভবনটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এই অবস্থায় কারখানাটিতে চলে লুটপাট। মূলত কারখানার মালামাল লুটপাটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থেকে ভবনে আগুন দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ড্রোন ক্যামেরা ও মই ব্যবহার করে কোনও মৃতদেহের আলামত পায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। পরে ভবনের নিচের বেসমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় তারা। ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ফ্লোর ধসে পড়ায় তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে উদ্ধারকাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) টিম।
গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণশুনানি শেষে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ৭৮ জনের তালিকা সংগ্রহ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম। ওই দিন বিকালে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ করে মাথার খুলি ও হাড়ের টুকরো পেয়েছেন বলে দাবি করেন। উদ্ধার হওয়া হাড়গুলো পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের দাবি অনুযায়ী ১৭৪ জন নিখোঁজের তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস। পরে নিখোঁজের তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা ফের নতুন করে ১২১ জনের তালিকা করেছে। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম করা হয়। সেখানে নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে কমিটি।