কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে প্রতি তিন মাস পরপর কোটি কোটি টাকা পাওয়া যায়। এটি সবার জানা। কিন্তু এ পর্যন্ত কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে—এ তথ্য সবার কাছে এতদিন ছিল অজানা। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি ছিল অতি গোপনীয়! এমনকি সাংবাদিকরা বারবার চেষ্টা করেও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে এ তথ্য বের করতে পারেননি। অবশেষে জানা গেলো সেই তথ্য।
জানা গেলো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে দানের টাকার পরিমাণ।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান আজ শনিবার দুপুরে পাগলা মসজিদে সাংবাদিকদের কাছে এর তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া আয় থেকে মসজিদ পরিচালনা, এতিমখানা পরিচালনা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা কিশোরগঞ্জের রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সকল খরচা বাদে এ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা দিয়ে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদের জন্য বহুতল ভবন ও ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এ টাকা দিয়ে মসজিদের জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য উন্নয়নকাজে ব্যয় করা হবে।
জানা গেছে, প্রতি তিন মাস পরপর পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকগুলা খোলা হয়। সবশেষ আজ শনিবার সকালে মসজিদের ১১টি লোহার সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় ২৮ বস্তা টাকা। আর এসব টাকা গণনায় অংশ নেন ব্যাংকের ৬০ কর্মচারীসহ ৩৭০ জন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের নিচতলায় বিভিন্ন স্থানে থাকা দানসিন্দুকগুলো একে একে খোলা হয়। এরপর প্লাস্টিকের বস্তাভর্তি টাকা নেয়া হয় দ্বিতীয় তলায়। মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় টাকা গণনার কাজ।
দানবাক্সে পাওয়া ২৮ বস্তা টাকা গণনার কাজে অংশ নেয় পাগলা মসজিদ নুরানি কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১০০ জন শিক্ষার্থী, জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার ২০০ শিক্ষার্থী, রপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তিন শতাধিক মানুষ।
টাকা গননা কাজে দিনভর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেওয়া হয় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এবার ৪ মাস ১১ দিন পর দানসিন্দুক খোলা হয়। এর আগে, সবশেষ গত ৩০ নভেম্বর দানসিন্দুক থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা । এবার আরও একটি দানসিন্দুক বাড়ানো হয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা চরে। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর এখানে নির্মিত মসজিদটি পাগলা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়। পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এ মসজিদে দান করে থাকেন। গত কয়েক বছর ধরে দিন দিন বাড়ছে দানের টাকার পরিমাণ।