X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

১১ বছরেও মেলেনি সাত খুনের বিচার, আ.লীগ সরকারকে দুষছেন নিহতের স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৯আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৯

দীর্ঘ ১১ বছরেও নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সালের এই দিনে (২৭ এপ্রিল) সাত জনকে অপহরণ করে খুন করা হয়। পরে একে একে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে। এই ঘটনায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডসহ ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। এদিকে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দুষছেন নিহতের স্বজনসহ আইনজীবীরা। এখনও ভয় ও শঙ্কায় দিন কাটে নিহতের স্বজনদের।

জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।

পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাড়ে ছয় বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করেন নিহতের স্বজনরা।

নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘আসামিরা আওয়ামী লীগের নেতা ও আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকর্তা হওয়ায় রায় কার্যকর করতে এত টালবাহানা করছিল। এ কারণে গত ১১ বছরেও বিচার পাইনি।’

নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আব্দুস সালাম বলেন, ‘১১ বছর ধরে সাত খুনের বিচার পাইনি। এই মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেন ছিল শামীম ওসমানের পালিত লোক। আর নুর হোসেন সব সময় শামীম ওসমানের হুকুম তামিল করতো। কিছুদিন আগে জিয়াউল আহসান বলেছে শামীম ওসমান এই সাত খুনের ব্যাপারে সব জানে। আসামিদের হাত অনেক ওপর মহলে থাকার ফলে মামলায় রায় কার্যকর হতে বিলম্ব হচ্ছে। সরকারের কাছে আমার আবেদন এই মামলার রায় যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হয়।’

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘মামলার শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত আসামিদের লোকজন আমাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এ ছাড়া মামলা থেকে বাদ পড়ে যাওয়া আসামিরা সব সময় আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। ফলে আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি ভয়ে থাকি।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাবকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। র‌্যাবের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় প্রকাশ্যে সাত জন ব্যক্তি তুলে নিয়ে হত্যা করে গুম করা হয়।’

সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল এই মামলার জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি কর্নেল তারেক সাঈদ সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাতা। অন্য আসামিরাও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আত্মীয়স্বজন। ওই সময় যদি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হতো তাহলে সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান ও র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউলের নাম উঠে আসতো। তারাও এই ঘটনায় জড়িত ছিল। তাদেরকে সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার) রক্ষা করেছে। যে কারণে তাদের এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়নি।’

বিগত সরকার মামলার শুনানি আটকে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অ্যাপিলেট ডিভিশনে মামলাটি আটকে আছে। বিগত সময়ে শেখ হাসিনার সরকার এই রায়কে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছে এবং অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাতে শুনানি না হয় তা নিশ্চিত করেছে। তবে বর্তমান সরকার এই মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, ‘আসামিপক্ষরা কোনও রকমের সুবিধা নিতে পারবে না। আশা করি, মামলাটি দ্রুত নিষ্পন্ন হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন অপহৃত হন। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে