টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার কর্মী। তবে অনেক জেলার কর্মীরা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানালেও কর্মসূচি পালন করছেন না। ফলে গ্রাহকসেবায় তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। মঙ্গলবার (২৭ মে) থেকে সারা দেশে কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও অনেক জেলার কর্মীরা বলছেন, কর্মবিরতির সঙ্গে তারা নেই।
যশোর
আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানালেও কর্মবিরতিতে নেই যশোরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক, জরুরি সেবা চালু, অভিযোগ নিরসন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন তারা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকাসমূহে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বলে যশোর সদর, বাঘারপাড়া, শার্শা, ঝিকরগাছা উপজেলার কয়েকজন কর্মীর কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোলাম কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝিকরগাছায় কেউ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন না। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।’
বাঘারপাড়া সমিতির দায়িত্বে থাকা ডিজিএম সোহানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অফিসে কার্যক্রম স্বাভাবিক। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কিছু কর্মী ঢাকায় গেছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে আমাদের জনবল আছে। এখানে কোনও কর্মসূচি নেই আমাদের।’
শার্শা উপজেলার দায়িত্বে থাকা সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মারফত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে কর্মবিরতি পালন হচ্ছে না। লাইনম্যান-শ্রমিকদের এই আন্দোলনে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন আন্দোলনে আমরা নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যা যা প্রয়োজন তার কোনও ঘাটতি নেই আমাদের।’
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী হরেন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে শুরু করে গ্রাহকসেবার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। কর্মচারীদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন ঢাকায় সমাবেশে গেছেন। এতে জরুরি সেবা ব্যাহত হবে না।’
খুলনা
খুলনায় কোনও ধরনের কর্মসূচি পালন হয়নি আজ। গত কয়েকদিনও হয়নি। ঢাকার কর্মসূচিতে খুলনার কোনও কর্মী যাননি। তবে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম রয়েছেন এখানের কর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা পল্লী বিদ্যুতের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, সাত দফা দাবির সঙ্গে তারা একাত্ম। তবে কর্মবিরতির বিপক্ষে তারা। গত বছর এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। তখন খুলনার কর্মীরা সরব ছিলেন। এবারের আন্দোলন ঢাকাকেন্দ্রিক। তাই ৮০টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঢাকা ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। খুলনায় আলাদা কোনও কর্মসূচি গত সাত দিনে দেওয়া হয়নি।
ময়মনসিংহ
ঢাকায় কর্মবিরতি চললেও ময়মনসিংহে এর কোনও প্রভাব নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে সম্ভুগঞ্জ, ভালুকা, মুক্তাগাছা এবং ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সমিতির কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কর্মচারীদের কর্মবিরতি নেই। গ্রাহকরা কার্যালয়ে এসে প্রয়োজনীয় সেবা নিয়ে ফিরছেন। কর্মবিরতির বিষয়ে কর্মচারীদের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
চট্টগ্রাম
ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলার তিনটি সমিতির কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন মঙ্গলবার। সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন কর্মীরা। তবে স্বাভাবিক ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ। তবে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, অফিসিয়াল কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জোনাল ম্যানেজার মো. মামুন অর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মবিরতির মধ্যেও গ্রাহকসেবা, পরামর্শ দিয়েছি আমরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ শতভাগ স্বাভাবিক ছিল।’
লক্ষ্মীপুর
বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে কর্মবিরতি পালন করেছেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুরে সমিতির প্রাঙ্গণে এ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা, মিটার রিডার সেলিম, লাইন টেকনিশিয়ান শরিফুল ইসলাম, এজিএম মাসুদ, এজিএম (এইচআর) মাসুদুর রহমান প্রমুখ।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী কর্মীরা। এতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলেন ওই সব জেলার গ্রাহকরা। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন। নিয়মিত সেবা না দিলেও জরুরি সেবা চালু রেখেছে তারা।
সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এখন সাত দফা দাবিতে সাত দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন তারা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। এর সঙ্গে ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জমা দেওয়া হয়। তাদের দাবির মধ্যে আছে, আরইবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন। মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক ও পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা।