X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে তামান্না আক্তার নূরা

যশোর প্রতিনিধি
০৬ মে ২০১৯, ১৬:৫৪আপডেট : ০৬ মে ২০১৯, ১৭:৫৬

তামান্না আক্তার নূরা

ইচ্ছেশক্তি আর পরিশ্রম করলে যে কোনও প্রতিবন্ধকতাই দূর করা সম্ভব এটাই প্রমাণ করেছে তামান্না আক্তার নূরা। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা মোড়লপাড়া এলাকার রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির মেয়ে নূরা শারীরিক প্রতিবন্ধী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

তার বাবা-মা এবং স্কুলের শিক্ষকরা এই ফলাফলে দারুণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তামান্না আক্তার নূরার জন্ম থেকেই দুটি হাত ও ডানপা নেই। এক পায়ে লিখে সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি এবং সর্বশেষ এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেলো।

নূরার বাবা রওশন আলী স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদ্রাসার (নন এমপিও) বিএসসির শিক্ষক। মা গৃহিণী, তিনি বাড়ির কাজ দেখাশোনা করেন। তিন সন্তানের মধ্যে নূরা সবার বড়, মেঝজন মেয়ে মুমতাহিনা রশ্মি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে আর ছোট ছেলে মহিবুল্লাহ তাজের বয়স চার বছর।

২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নূরা জন্মগ্রহণ করে। জন্মের পরে এই দম্পতি মেয়েকে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু সে কারও বোঝা হোক- এটা তারা চাইতেন না। তাই ছয় বছর বয়সে অনেক চেষ্টা করে নূরাকে তার মা লেখা শেখিয়েছেন। প্রথমে পায়ের ভেতর কাঠি দিয়ে এবং পরে কলম দিয়ে লেখা শেখান। মাত্র দু’মাসেই মেয়ে পা দিয়ে লেখা ও ছবি আঁকা রপ্ত করে ফেলে। পরে নূরাকে ভর্তি করান বাঁকড়ার একটি স্কুলে। তাকে স্কুলে আনা নেওয়ার কাজটা করতেন তার বাবা-মা।

তামান্না আক্তার নূরার আঁকা ছবি

২০১৩ সালে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও বৃত্তি পায়। এতে তার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়, পরে জেএসসিতেও সে জিপিএ-৫ পায়।

তামান্নার বাবা রওশন আলী জানান, মেয়ের মা একজন মহান ব্যক্তি। তিনিই মেয়েটিকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। বহু প্রতিকূলতা বয়ে গেছে তার জীবনে। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য এই উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর এলাকায় শ্বশুরের জায়গায় সেমিপাকা ঘর করে তারা থাকেন।

রওশন আলী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার মাস তিনেক আগে মেয়েকে অংক আর রসায়ণ পড়ানোর জন্য দুইজন শিক্ষকের সহায়তা নিই। এছাড়া অন্য সাবজেক্টগুলো আমি নিজেই পড়াতাম।

বছরখানের আগে ব্যক্তিগতভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক কর্মী নূরাকে একটি হুইল চেয়ার দেয়। যার ফলে মেয়েটির চলাচলে কিছুটা সুবিধে হয়েছে।মেয়ের এই ফলাফলে তিনি ও তার স্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অনুভূতি জানতে চাইলে তামান্না জানায়, আশা ছিল গোল্ডেন এ প্লাস মার্ক পাবে। তবুও সে এই ফলাফলে খুব খুশি। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে তার। চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চায় নূরা।

তামান্না ঝিকরগাছার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সে এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন,‘নূরা খুবই প্রতিভাবান। তার লেখা খুব স্পষ্ট ও চমৎকার। এবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১৬০ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেয় ৪৭ জন যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে একজন। ’

তিনি বলেন,‘এই ফলাফলে আমরা সবাই খুশি। নূরার প্রতি শিক্ষক ও তার সহপাঠীদের দারুণ সহযোগিতা ছিল।’ সে অনেক দূর যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা