X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ক্লিনিক-হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান

অবৈধ জেনেও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০১ জুন ২০২২, ২১:৩২আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ২১:৩৬

খুলনা বিভাগে গত তিন দিনের অভিযানে ৩১১টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখনও অভিযান অব্যাহত আছে। দীর্ঘদিন এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের চোখের সামনেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। কিন্তু এতদিন কেন এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন সবার মনে।

জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, একসময় জেলা ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনে যেতেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তখন কাগজপত্র ও অনুমোদন না থাকলে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিতেন তারা। কয়েক বছর আগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এই ক্ষমতা বাতিল করা হয়। এ অবস্থায় অনুমোদন না থাকা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে সুপারিশ করতে হতো। লাইসেন্স বাতিল কিংবা বন্ধের ক্ষমতা তাদের হাতে ছিল না। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকেই দেওয়া হতো। ফলে দীর্ঘদিন পরিদর্শন ও সুপারিশ দিতে না পারার সুযোগে অসংখ্য অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীতে অনিবন্ধিত ৩৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই বছরের পর বছর কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল তারা। এর মধ্যে কোনও কোনও ক্লিনিক মালিক আবেদন না করেও প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন: অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক: রুটিন কাজে নির্দেশনা লাগলো কেন?

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. মনজুরুল মুরশিদ বলেন, ‌‘আগে আমরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনে যেতাম। কিন্তু বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। অবৈধ হওয়ার পরও কেন্দ্রে সুপারিশ করতে হতো। কেন্দ্রে এই ধরনের সুপারিশ যেতেই প্রতিষ্ঠান মালিকরা ভিন্নপথে আবেদন করে আমাদের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দিতেন। ফলে বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছিল।’

তিনি বলেন, ‘এবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে তৃণমূলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দিতে পারছেন। এখন থেকে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‌‘আগে আমরা কাগজপত্র দেখে অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র শনাক্ত করতাম। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জটিলতা ছিল। এবারের আদেশে সেসব জটিলতা কেটে গেছে। ফলে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘খুলনা মহানগরীতে অনিবন্ধিত ৩৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার তিন দিনের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি জেলার আরও ১৯টি অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনার নয় উপজেলায় ১২৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাকিগুলো ক্লিনিক। ইতোমধ্যে ১৯টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন: এক জেলায় ২৪০ ক্লিনিকের ২৩৩টি অবৈধ

ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী খুলনা মহানগরীতে ২২৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ১৩২টি। বাকিগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল ৩৯টি। সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, ‘করোনার দুই বছর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এক ধরনের ঢিলেঢালা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তৃণমূলে থেকে আমরা পরিদর্শনে গিয়ে ত্রুটি পেলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারতাম না। কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাতে হতো। এখন নতুন নির্দেশনায় আমরা সরাসরি অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বন্ধ করে দিতে পারছি। ইতোমধ্যে কয়রার তিনটি ক্লিনিকের মধ্যে বাদশা ক্লিনিক অবৈধ হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছি। বাকি দুটি ক্লিনিকের নিবন্ধন আপডেট করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন: দিনাজপুরে অভিযানে ধীরগতি, অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের হিসাব নেই 

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১ মে পর্যন্ত তিন দিনের অভিযানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অবৈধ ৩১১টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মহানগরীতে ৩৯টি, খুলনা জেলায় ১৯টি, বাগেরহাটে ২২টি, সাতক্ষীরায় ১০টি, যশোরে ৬৬টি, ঝিনাইদহে ২১টি, মাগুরায় ২৭টি, নড়াইলে ২৪টি, কুষ্টিয়ায় ২৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ৩৬টি ও মেহেরপুরে ১৯টি।

খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি নীতিমালায় একটি ১০ শয্যার ক্লিনিক পরিচালনায় তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, ছয় জন আয়া এবং তিন জন সুইপার নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু ক্লিনিক পরিচালনায় সরকারি নীতিমালা বিভিন্ন অজুহাতে মানছেন না অনেক প্রভাবশালী ক্লিনিক মালিক।

/এএম/
সম্পর্কিত
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮ নির্দেশনা
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা