আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ‘এক দফা আন্দোলনের নামে দেশকে ধ্বংস করতে চায় বিএনপি-জামায়াত। তাদের এক দফা হলো—দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধ্বংস, উন্নয়ন ব্যাহত করা, অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা।’
বুধবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রায় দেড় যুগ পর সংগঠনের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত আবারও ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ নির্যাতনের শিকার হবে উল্লেখ করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করবে, কেননা তারা শান্তি-সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। সুযোগ পেলেই তারা দেশকে তছনছ করে দেবে, লুটপাট করবে, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে দেবে। আজ বিশ্ব দরবারে আমাদের যে, মানমর্যাদা তা ভূলুণ্ঠিত করে দেবে তারা।’
আওয়ামী লীগের শাসনামলে শান্তি ও স্বস্তির উদাহরণ টেনে দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে দেশে জঙ্গি গোষ্ঠী আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও আমরা ৫ শতাংশ দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য-সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে এগিয়ে গিয়েছি। এখন ডিজিটাল নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনা সব অপরাজনীতি মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্ব ও সততা বিশ্বে অনন্য মর্যাদা লাভ করেছে।’
সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিঠুর সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাছির উদ্দিন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দিন, কৃষিবিদ আব্দুস সালাম, খায়রুল হাসান জুয়েল, আবদুল্লাহ আল নাইম ও তাওহিদুর রহমান প্রমুখ। এর আগে বিকাল ৫টায় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে দুর্বার গতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সবক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এখন বিশ্বে সমাদৃত। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রায় সব সূচকে এগিয়ে আছে।’
শেখ হাসিনা দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন জানিয়ে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘সে কারণে দুস্থদের কল্যাণে দুস্থভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা। দেশে লাখ লাখ গৃহহীনকে ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। দেশের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
বিগত শাসনামলে বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের তথ্য তুলে ধরে কাজী নাবিল আহমেদ আরও বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মানুষের ঘরবাড়ি লুট, পুকুর লুট, সাংবাদিকদের হত্যা, গ্রেনেড হামলা এবং সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি নিত্যদিনের ঘটনা। তারা আবারও সংঘবদ্ধ হচ্ছে দেশকে পেছনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদের সেই স্বপ্নপূরণ হতে দেবো না।’
বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন দেশে বর্তমান সরকারের বিষোদগার করে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘এতে কোনও লাভ হবে না। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর যেমন আস্থা রয়েছে, তেমনি বিশ্ববাসীও আস্থাশীল। ফলে আগামী নির্বাচনে আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা।’
সম্মেলনের উদ্বোধক স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, ‘নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ২০১৪ সালে তারা জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। এবারও চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের একজন কর্মীও বেঁচে থাকতে তাদের সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেবো না।’
প্রসঙ্গত: সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় দুই দিন এবং সারা দেশে এক দিন পদযাত্রা করবে তারা। বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।