X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে কেন কমেছে আমদানি?

আসাদুজ্জামান সরদার, সাতক্ষীরা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০১আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০১

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। আগে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২০০-এর নিচে। ফলে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। বেড়েছে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম। 

স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়ে। অথচ এই বন্দর দিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আমদানি কমছে। বন্দরের অনুন্নত অবকাঠামো, ভাঙাচোরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসায়িক হয়রানি, বৈধ সব পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকা, দক্ষ নেতৃত্বের অভাব ও ডলার-সংকট আমদানি কমার মূল কারণ। এসব সমস্যা সমাধান করলে এমনিতেই আমদানি বেড়ে যাবে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ভোমরা স্থলবন্দর। ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যেকোনো বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহী হন। বর্তমানে বন্দরটিতে আমদানি-রফতানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। আগে প্রতিদিন বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হতো তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১০০ কোটি টাকার মতো। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ২৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও আমদানি কমে যাওয়ায় আদায় হয়েছে মাত্র ৬৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৮৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আমদানি কমে যাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে ১৪৩, ১৮ জানুয়ারি ১৬৭, ২০ জানুয়ারি ১৪৯, ২১ জানুয়ারি ১৬৮, ২২ জানুয়ারি ১০৯, ২৩ জানুয়ারি ১৫৯ ও ২৪ জানুয়ারি ১৫৯টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি) শুরু থেকে একই পরিমাণ অর্থাৎ দিনে গড়ে দেড় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আসছে। যা আগে ছিল চার শতাধিক। এই হিসাবে দিন দিন আমদানি কমছে।

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ভোমরা স্থলবন্দর

আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরের অনুন্নত অবকাঠামো, ভাঙাচোরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসায়িক হয়রানি ও ডলার-সংকটে আমদানি কমায় এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ডলার-সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ঋণপত্র দিচ্ছে না। আগে ১০ শতাংশ মার্জিনে ঋণপত্র খোলা যেতো। এখন ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে ১৫০ শতাংশ। টাকার মূল্য কম অজুহাতে ঋণপত্র খোলার সময় ডলার মূল্য ধরা হচ্ছে ১১৫ টাকা, অথচ বিল পাস হচ্ছে ১২৫ টাকার। আবার চাঁদার জন্য হয়রানি তো আছেই। এ অবস্থায় আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ায় আমদানি কমেছে।

একাধিক ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্থলবন্দর দিয়ে ৭২ ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন থাকলেও নিয়মিত আমদানি হয় ২২টি। যেসব পণ্যের বেশিরভাগই কাঁচামাল ও ফল। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে বন্দর দিয়ে কোনও ফল আমদানি হচ্ছে না। এছাড়া অন্য যেসব পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়, সেগুলো বন্দরে আসার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ খালাস করতে গড়িমসি করে। খালাস করতে দেরি করায় কাঁচামালগুলো ট্রাকে পচতে শুরু করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। কাচাঁমাল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যে বন্দরে বেশি সুবিধা পাবেন, সেখান দিয়ে আমদানি করবেন, এটাই স্বাভাবিক।

দ্বৈতনীতি, অনুন্নত অবকাঠামো, সড়ক সংস্কারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও বন্দরের তিনটি বিভাগের সমন্বয়হীনতা আমদানি কমার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভোমরার প্রতিযোগিতা চলছে শুরু থেকে। বেনাপোলসহ অন্যান্য বন্দরে ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তুলনামূলকভাবে এখানের ব্যবসায়ীরা তা পান না। আগে বেনাপোল দিয়ে কাঁচামাল ও ফল আমদানি হতো না। ব্যবসায়ীরা ভোমরা দিয়ে আমদানি করতেন। বর্তমানে বেনাপোল দিয়ে কাঁচামাল ও ফল আমদানি হচ্ছে। ব্যবসায়িক সুবিধা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী এখন বেনাপোল দিয়ে আমদানি করছেন। ফলে ভোমরা দিয়ে কমেছে আমদানি।

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ভোমরা

ভোমরা দিয়ে আমদানি কমার কারণ শুধু ডলার-সংকট নয় বলে জানিয়েছেন বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক আহ্বায়ক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন। তিনি বলেন, ‘দেশের অন্যান্য বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক। অথচ ভোমরায় কেন অস্বাভাবিক? এখানের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। এজন্য অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে আমদানি কার্যক্রমে। তার ওপর বন্দরের উন্নয়নে দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। এখানে দক্ষ নেতৃত্ব না থাকায় ব্যবসায়ীদের সমস্যায় পড়তে হয়। এই জাতীয় নানা কারণে আমদানি কমে গতি হারিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য।’

তবে ডলার-সংকটের পাশাপাশি ব্যবসায়িক হয়রানিকে দুষছেন সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান। তিনি বলেন, ‘ডলার-সংকট অনেকাংশে আমদানিতে প্রভাব ফেলেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। হয়রানি তো আছেই। আবার সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন নেই। বর্তমানে বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের চাহিদা দেশের বাজারে কম থাকায় ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দর দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। ডলার-সংকট, এলসি জটিলতা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতাসহ মূল সমস্যাগুলো সমাধান করলে এখানের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে কাস্টমসের ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, ‘পণ্য চাহিদার ওপর আমদানি কমবেশি হয়। ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ এলসি করবেন, তার বিপরীতে পণ্য আমদানি হবে। এখানে কাস্টমসের কিছুই করার নেই।’

অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের ট্রাফিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, বন্দরের আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের সমস্যা। আগেও এই অবকাঠামোর মধ্যে আমদানি-রফতানি হয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করি। ইতোমধ্যে বন্দরের কাছে ১০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে অবকাঠামোর উন্নয়নকাজ শুরু হবে। সরকার বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কাজগুলো শেষ হলে কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সম্প্রসারিত হবে বাণিজ্য।

/এএম/
সম্পর্কিত
মে দিবসে বন্দরগুলোতে আমদানি-রফতানি বন্ধ
নির্বাচনে অনিয়ম হলে কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে: ইসি হাবিব
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সর্বশেষ খবর
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
লন্ড‌নের মেয়র প‌দে হ্যাটট্রিক জ‌য়ের প‌থে সা‌দিক খান
থ্রিলার বনাম হরর: প্রেক্ষাগৃহে নতুন দুই সিনেমা
এ সপ্তাহের ছবিথ্রিলার বনাম হরর: প্রেক্ষাগৃহে নতুন দুই সিনেমা
অপতথ্য ও অর্ধসত্যের মাঝে মুক্ত গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ
অপতথ্য ও অর্ধসত্যের মাঝে মুক্ত গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদারের সাক্ষাৎকার
নিখিল কৃষ্ণ মজুমদারের সাক্ষাৎকার
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা