খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ উদ্বোধন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুর ২টায় প্রধান অতিথি হিসেবে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে তিনি এ তোরণ উদ্বোধন করেন। জুলাই-২০২৪ অভ্যুত্থানে শহীদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ নামকরণ করা হয়েছে।
পরে তোরণ উদ্বোধন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘শহীদ মীর মুগ্ধদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণরা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন দেশের প্রয়োজনে তারা যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এই বীর শহিদদের স্মৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিমুক্ত একটি ক্যাম্পাসে মীর মুগ্ধর মতো রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠছে। মীর মুগ্ধকে আমরা হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু তার মতো অনেকেই এই ক্যাম্পাসে এখনও আছে। মুগ্ধ ছিল মানবিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন শিক্ষার্থী। আন্দোলনের মধ্যে “ভাই, পানি লাগবে পানি” বলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আজ তার স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক “শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ” আমি এবং মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ উদ্বোধন করতে পেরেছি- এটা আমাদের জন্য গর্বের।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের খুনি শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অবশ্যই করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য অন্তত নির্বাচন আয়োজনের আগে খুনিদের বিচারকাজ শুরু করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছে, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার- দুটিই সরকারি প্রতিষ্ঠান। উভয় প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসবে বলে আশা করি।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মজিদ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. নাজমুল আহসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ও অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। সভায় আরও বক্তৃতা করেন মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের মো. রাকিবুল হক ও গণিত ডিসিপ্লিনের সৈয়দ কাশেম আলী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালক আইরিন আজহার ঊর্মি।
সভার শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, পেশাজীবী ও নাগরিক নেতৃবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
