যশোরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে পালিত ছেলে শেখ শামস (২২)। রবিবার বিকালে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত আলী তার জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। পরে তাকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে শনিবার বিকালে যশোর শহরের মণিহারের ফলপট্টিতে নিজের শামস মার্কেটের দোতলার বাসা থেকে খালেদা সিদ্দিকী রুমি (৬২) নামের ওই মায়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় পালিত ছেলে শেখ শামসকে আটক করে পুলিশ। রুমি শহরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহ এলাকার মৃত শেখ শাহজাহানের স্ত্রী। কোনও সন্তান না থাকায় তিন মাস বয়স থেকে শামসকে দত্তক নিয়ে লালনপালন করেছিলেন এই মা।
শনিবার রাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রুমির ভাতিজা জোবায়ের তানভীর সিদ্দিকী হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত একমাত্র আসামি শেখ শামস। তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার দুপুরে আদালতে পাঠালে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
যশোর আদালতের পরিদর্শক রোকসানা খাতুন বলেন, দুপুরে আসামি শামসকে আদালতে আনা হয়। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শামস মাদকাসক্ত। বিভিন্ন সময়ে মাদকের টাকার জন্য মাকে মারধর ও বাড়ির আসবাব ভাঙচুর করতো। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
নিহতের ভাতিজা জোবায়ের তানভীর সিদ্দিকী ও ভাগনে এসএম মাহমুদ জানিয়েছেন, শামস মাদকসেবী। মাকে হত্যার পর লাশ ঘরেই রেখে দিয়েছিল। কাউকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে তিন মাস বয়সী শামসকে খুলনা থেকে দত্তক এনেছিলেন রুমি ও শেখ শাহজাহান দম্পতি। শাহজাহান প্রায় আট বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। ফলপট্টি এলাকায় তাদের শামস মার্কেট রয়েছে। মার্কেটের দোতালায় রুমি ও তার পালক সন্তান শামস থাকতেন। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল রুমির পালক সন্তানটি মাদকসেবী।
মার্কেটের দোকানি জাকির হোসেন জানান, নিচতলার দোকানগুলোর লাইনে পানি না পাওয়ায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে দোতলায় গিয়ে চাচির (রুমি) খোঁজ করেন। তখন ঘরের ভেতরে শামস ছিল। তিনি তাকে জানান, মা বাড়ি নেই, খুলনায় গেছে। দুপুরে আবার খোঁজ নিতে গেলে শামসের কথা তার কাছে উল্টাপাল্টা মনে হয়। তিনি মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ডাকেন। এরপর জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে শামস একই কথা বললেও দরজা খুলতে চাননি। অনেক জোরাজুরির পর দরজা খুললে দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে চাচির লাশ পড়ে আছে। লাশের নিচের মেঝে রক্তাক্ত। এরপর লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।