গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নয় সন্তান নিহত হারানো বাবা হামদি আল-নাজ্জার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। নিজেই চিকিৎসক এই ব্যক্তি দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে নিজ বাড়িতে থাকাকালীন শুক্রবার রাতে হামলায় আহত হন। বর্তমানে তিনি নাসের হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় (আইসিইউ) রয়েছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তার শরীরে রক্তক্ষরণ থামাতে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের থোরাসিক সার্জন আবদুল আজিজ আল-ফাররা। তিনি বলেন, আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ করেন, তাকে সাহায্য করেন।
হামলার সময় বাড়িতে ছিলেন হামদি ও তার ১০ সন্তান। হামলায় নয়জন নিহত হয়, একজন কেবল বেঁচে আছে—তবে সেও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার সময় বাড়িতে ছিলেন না হামদির স্ত্রী আলা। তিনিও একজন চিকিৎসক। তিনি তখন একই হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তার আত্মীয় তাহানি ইয়াহইয়া আল-নাজ্জার বলেন, তিনি বাড়িতে পৌঁছে দেখেন তার সব সন্তান পুড়ে গেছে... আল্লাহ যেন তাকে সহ্য করার শক্তি দেন।
তাহানি রবিবার তার ভাইকে দেখতে হাসপাতালে যান। কানে কানে ফিসফিস করে বলেন, তুমি ঠিক আছো, এটা কেটে যাবে।
হামলার পরের দিন, শনিবার হামদির ভাই আলি আল-নাজ্জার জানান, তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে পোড়া মরদেহগুলো বের করতে থাকি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তারা ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে। তবে তাদের ভাষ্য, টার্গেট ছিল একটি কাঠামোর মধ্যে অবস্থান নেওয়া সন্দেহভাজনরা, যারা সেনাদের কাছাকাছি ছিল। তারা জানিয়েছে, হামলার আগে ওই এলাকা থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেনাবাহিনী এই হামলায় ‘অংশ না নেওয়া বেসামরিক মানুষের’ মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত নয় শিশু ছিল এক থেকে বারো বছর বয়সী। বেঁচে থাকা শিশুটিও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।
গাজায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইতোমধ্যে ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিশু।
এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে, যখন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করে। এর জবাবে ইসরায়েল ‘হামাসকে উৎখাত ও অপহৃতদের মুক্তি’ নিশ্চিত করতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে।
খান ইউনুসকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধের কারণে গাজার প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষের সবাই এখন বাস্তুচ্যুত।