X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক বাঁধে কেটে গেলো হারানোর ভয়

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:০০আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৯

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের প্রয়াগ বিলকে ঘিরে আছে স্রোতস্বিনী ধনু নদী। হাওর অধ্যুষিত প্রয়াগ বিলে এখন বোরো ধান চাষ নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। এবার সেখানে অন্তত এক হাজার একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। একটু জায়গাও পড়ে নেই। সবুজে ছেয়ে গেছে পুরো বিল।

বোরো চাষ নিয়ে এবারের মতো এতটা নির্ভার কখনও ছিল না এখানকার কৃষক। প্রায় প্রতি বছর আগাম বন্যার শিকার হতো তারা। পানিতে তলিয়ে যেত হাজার হাজার মণ ধান। ফসলের নিরাপত্তা না থাকায় অর্ধেকে নেমেছিল বোরো চাষ। পতিত পড়ে থাকতো অনেক জমি।

প্রয়াগ বিলের ফসল রক্ষা বাঁধটি মাটি দিয়ে নির্মিত হওয়ায় ধনু নদীর পানির চাপে প্রায়শই ভেঙে যেতো। কৃষকদের দাবি ছিল একটি টেকসই বাঁধ, যা কখনও ভাঙবে না। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাইকার (জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা) টাকায় এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর) একটি টেকসই ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছে প্রয়াগ বিলে। কাজও প্রায় শেষ। এক বাঁধে কেটে গেলো হারানোর ভয়

স্থানীয়রা বলছেন, জেলাজুড়ে অন্যান্য ফসল রক্ষা বাঁধের মেরামত কাজ শেষ হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। তবে তাদের বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে পানি আসার অন্তত তিন মাস আগে। এ কারণে তাদের মাঝে আর ফসল হারানোর ভয় নেই।

জানা গেছে, নতুনভাবে বাঁধটি নির্মিত হওয়ায় সাগুলি, উত্তর গণেশপুর, দক্ষিণ গণেশপুর, খাকশ্রী ও নিয়ামতপুর গ্রামের হাজারের বেশি কৃষক উপকৃত হবেন।

সাগুলি গ্রামের কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এবারের বাঁধটি সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের ফসল অনেকটাই নিরাপদ। বড় কোনও প্লাবন বা বন্যা ছাড়া ধানের ক্ষতি হবে না।

এক বাঁধে কেটে গেলো হারানোর ভয় এ গ্রামের বড় কৃষক জালাল উদ্দিন। জানালেন, এবার প্রয়াগ বিলে তিনি সবচেয়ে বেশি ২৫ একরে বোরো ধান চাষ করেছেন। অন্যবার পানির ভয়ে অনেক কম চাষ করতেন। তিনি বলেন, জীবনে কতবার যে ফসল হারিয়ে কেঁদে বাড়িতে গেছি, এর কোনও হিসাব নেই। এবার সব কৃষকের মনোবল চাঙা। এ কারণে বিলের সব জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এই বাঁধই আমাদের সাহস জোগাচ্ছে।

করিমগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলী বখতিয়ার হোসেন জানান, ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় বাঁধটি করা হয়েছে। বাঁধটির দৈর্ঘ্য ১৯৫০ মিটার। ১৯৯৬ সাল থেকে মাটির বাঁধটি ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হয়। তবে এখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ছিল ৪৫৬ মিটার। নদীর পাশে হওয়ায় এ জায়গাটি ভেঙে যেতো। সেখানে এবার সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এখন ফিনিশিংসহ শেষের কাজগুলো করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বাঁধ ছাড়াও বিলে একটি খাল খনন করা হয়েছে। যেখান থেকে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে মাছ চাষও করতে পারবে।

কিশোরগঞ্জে কর্মরত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জাইকার সোসিওলজিস্ট মো. মারুফ উল আলম দাবি করেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের কারণে এখানকার কৃষকদের ফসলের ঝুঁকি কমেছে। এতে তাদের জীবনমান উন্নত হবে। প্রায় ঝুঁকিমুক্ত ফসলের নিশ্চয়তা পেয়ে কৃষকরা খুশি হয়েছেন। এ ধরনের বাঁধ হাওরের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

সাগুলি গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জিয়া উদ্দিন ও জহিরুল ইসলাম মনে করেন, হাওরে প্রতি বছর মাটি কেটে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বা মেরামত না করে, টেকসই বাঁধ নির্মিত হলে কৃষকের বেশি উপকারে লাগবে। বাঁধের জন্য প্রতি বছর দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। এক বাঁধে বহু বছর চলে যাবে।

জানা গেছে, এই বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে ‘সাগুলি প্রয়াগ বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সংগঠন করেছেন কৃষকরা। এ সংগঠনে এখন ২৭৫ জন সদস্য রয়েছে। আরও অনেকে সদস্য হতে আবেদন করেছেন। প্রকল্পের আওতায় তাদের একটি অফিসও স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে।

/এফআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ