জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই সিয়াম শেখের। তবে এই প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি খেলাধুলা কিংবা লেখাপড়া থেকে। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার এই কিশোর এবছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩ দশমিক ৮৩ (এ মাইনাস) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর জিন্নাহ মিয়ার ছেলে সিয়াম পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরিজীবী হতে চায়।
এলাকাবাসী জানায়, ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে সিয়াম। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখান থেকেই জেএসসি পরীক্ষাতেও ভালো ফলাফল করে। এবার মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করলো সে।
দুই হাত না থাকলেও সিয়াম ক্রিকেট খেলতে পারে, সাঁতার কাটতে পারে, পা দিয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি তুলে গোসল করতে পারে এবং এমনকি পা দিয়ে চামচ ধরে ভাত মাখিয়ে খেতে পারে সে। বই খোলা ও পাতা উল্টানো, মোবাইল ফোন চালানোসহ সব কাজ পা দিয়েই করে অদম্য সিয়াম।
সিয়ামের মা জোসনা বেগম বলেন, সিয়ামের ছোট থেকেই স্কুলে যাওয়া, পড়ালেখা করার ইচ্ছে ছিল। ছোটবেলায় ওর বয়সীরা স্কুলে গেলে ওদের সঙ্গে আমাদের না বলেই স্কুলে চলে যেতো।
তিনি বলেন, তারপর ওর স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করা। ও সেটা করছে। এখন সিয়াম এসএসসি পরীক্ষায় দিয়ে পাস করেছে, খুব খুশি। তবে আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা ওকে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে পারি না। এখন কোথাও ভর্তি করাতে পারবো কি না জানি না।
সিয়াম শেখ বাংলা ট্রিবিউন বলেন, আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে সব থেকে বড় অবদান জাকিয়া সুলতানা ম্যাডামের। তিনি আমাকে পড়ালেখা করার সাহস জুগিয়ে পা দিয়ে আমাকে লেখা শিখিয়েছেন। আমার স্কুলের বন্ধুরা যারা সব সময় আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। কখনও বুঝতে দেননি যে, আমি প্রতিবন্ধী, তাদের জন্যই আমি আজ সফল। আমার ইচ্ছে পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরি করবো। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাবো, দেশের মানুষের সেবা করবো।
সিয়ামের শিক্ষক ও চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, সিয়াম আমাদের এখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বিনা বেতনে তাকে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। সে যদি আমাদের এখানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তাহলে তাকে বিনা বেতনে পড়ানো হবে।