X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
মেধাবী অর্ণবের শেষ চিঠি

‘তোমাদের স্বপ্ন ভেঙে চলে যাচ্ছি, আমার নিজেরই কোনও স্বপ্ন বেঁচে নেই’

মো. আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা
১৬ মে ২০১৬, ১৮:৪৯আপডেট : ১৬ মে ২০১৬, ২০:৪৪

সাতক্ষীরা সদরের রাজার বাগান এলাকার ব্যাংকার জিল্লুর রহমানের ছেলে মেধাবী ছাত্র সাদিদ ফারজিন অর্ণব মে মাসের ৯ তারিখে আত্মহত্যা করে। ১৩ তারিখ এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার জানতে পারা যায়, জিপিএ-৫ পেয়েছে আত্মহননকারী এই কিশোর।

সাদিদ ফারজিন অর্ণব

এমন মুহূর্তে পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনের চোখে অবিরত ঝরছে জল। পূর্বের বহু সাফল্যে ধারাবাহিকতায় এবারও অর্ণবের জিপিএ-৫ পাওয়া আনন্দের বন্যা বইয়ে দিতে পারতো ওই পরিবারে। কিন্তু এ ফল আরও বেশি কষ্টের উপলক্ষে পরিণত হয়েছে এখন।

সাতক্ষীরা শহরের রাজার বাগান এলাকায় অর্ণবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কনক্রিটের দেওয়ালে তার শেষ লেখাগুলো। অর্ণব কবিতা লিখতো, পড়তো প্রচুর বই। তার বিষণ্নতার নমুনায় তার ছাপ আছে। দেয়ালে লেখা আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের ‘ডেথ’ কবিতার শেষ কয়টি লাইন।

Many time he died,
Many time rose again.
A great man in his pride,
Confronting murderous man
Casts derision upon
supersession of breath;
He knows death to the bone
Man has created death.

দেয়ালে লেখা ইয়েটসের কবিতা

দেয়ালে কবি জসীম উদ্দীনের কবিতার একটি লাইন (আঁধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে আসিছে তেল) অনুসরণ করে লেখা— আঁধারের সাথে যুঝিয়া আমার ফুরায়ে আসিছে তেল। মৃত্যুর আগে দেয়ালে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ঘোষণাটি লিখেছে। I Quit!

দেয়ালের লেখাগুলো দেখে আজ ডুকরে কাঁদছেন অর্ণবের মা, বাবা, তার ছোট ভাইটি। অর্ণবের ডায়রির পাতাগুলো যেন কথা বলছে। বাড়িতে থাকা খালা জানালেন, সম্মানজনক সরকারি বৃত্তি পাওয়া ও অনেক পুরস্কারজয়ী মেধাবী বিতার্কিক অর্ণব শেষ দিকে সারাদিন ঘর থেকে আর বের হতো না। সারাদিন পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে সকাল ১০টায় উঠতো ঘুম থেকে।

মৃত্যুর আগে সে ডায়রিতে মৃত্যুর কারণ লিখে গেছে বলে দাবি করেছে। সেই সঙ্গে মে মাসের ৩ তারিখে লেখা ছয় পৃষ্ঠার একটি চিঠিতেও আছে এ বিষয়ে অনেক তথ্য। ডায়রি ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এখন রয়েছে পুলিশের হাতে। তেমনটাই জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নজরুল ইসলাম। 

ছয় পৃষ্ঠার চিঠিতে কী লিখেছে আবেগী কিশোর অর্ণব?

জসীম উদ্দিনের লেখা বাক্যের অনুসরণে লেখা বাক্য

লিখেছে, ‘I am sorry! শেষ পর্যন্ত আমাকে সত্যিই এই ডিসিশন নিতে হল। ডিপ্রেশন আমাকে জীবন্ত লাশই বানিয়ে রেখেছে। এভাবে আর পারছি না। আমি আমার মৃত্যুর কারণ লিখে যাচ্ছি। যদিও আমার ডায়রি যেটা এখন ‘ক’-এর (একটি মেয়েটির নাম) কাছে। ওটা থেকে আমার মৃত্যুর কারণ আরও স্পষ্ট হবে।’

‘আব্বু, তুমি অফিসে যাওয়ার আগে সব সময় আমার ঘুম ভাঙিয়ে ডেকে বলে যাও না। কিন্তু আজ তুমি বলে গেলে। Thank you আব্বু। তুমি কেঁদো না...’

‘আম্মু, মাফ করে দিও আমাকে। তোমাদের স্বপ্ন ভেঙে চলে যাচ্ছি, আমার নিজেরই কোনও স্বপ্ন বেঁচে নেই।... আর আমার মা-টা যখন কাঁদে খুব কষ্ট হয় আমার। কেঁদো না আর আম্মু! হয়তো দেখা হবে আবার।’

‘আবির (ছোট ভাই), তোর ড্রয়ার থেকে ২০০ টাকা চুরি করেছি। দিতে পারব না।... আম্মুর সাথে ঝগড়া করবি না। খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করবি। অন্য কোনও ইচ্ছা হলে আম্মুকে বলবি। একা একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কিন্তু আমার মত ফাঁসবি।.... আর শোন! নতুন বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজবি। বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয় না। ... প্রথম বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করলে সব পাপমুক্তি হয়। এটা তোর ভাই এর থিওরি।’

অর্ণবের বই ও পুরস্কারের একাংশ

রাহুল নামের একজনকে ভাইয়া সম্বোধন করে অর্ণব লিখেছে, ‘আমি জানি ছয় ছয় বার কেন আপনি আমাকে মেরেছেন। আপনার জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো এটাই করতাম। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন এত মানুষের সামনে মার খাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে?’

চিঠি পড়ে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে একটি মেয়েকে ভালোবেসে এসেছে অর্ণব। কিছুদিন বেশ ভালো সময় কেটেছে ওদের। এরপর বিভিন্ন কারণে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি মেয়েটির ওপর অনুরক্ত আরেক কিশোর পনের বিশজনের দল নিয়ে অর্ণবের ওপর ছয়বার চড়াও হয়। অর্ণব তখন রোজা রেখেছিল।

জানা যায়, শেষবার ছেলেগুলোর মারধরে অর্ণবের কান কেটে রক্ত পড়তে থাকে। ওর পরিচিত সমাজে ওকে এবং ওর পরিবারকে ছোট হতে হয়। এসব ঘটনায় অর্ণবের আত্মসম্মানবোধ ভীষণ আঘাতগ্রস্ত হয়। এ সময়ে বন্ধু ও স্বজনদের কাছ থেকে ক্রমেই সে দূরে সরে যেতে থাকে।  অভিমানী এই কিশোর যে ধীরে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা কেউ বুঝতে পারে না।

অর্ণবের পুরস্কারগুলো

অর্ণবের বাবা জিল্লুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অর্ণব আর ফিরে আসবে না। যাদের কারণে অর্ণব আত্মহত্যা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানাই।

মা মেহেরুন্নেছা বলেন, অর্ণব ছিল তাদের আশার বাতিঘর। ওই বাতিঘরে অন্ধকার নেমে এসেছে। ওর এসএসসির এই ‘এ প্লাস’ আমাদের কষ্টকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও।

এএসআই নজরুল ইসলাম জানান, অর্ণবের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে কোনও মামলা এখনও হয়নি। পরিবার ময়নাতদন্তে রাজি হয়নি। মামলা হলে এর যথাযথ তদন্তে পুলিশ সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে।

/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
কৃষকের মুখে হাসি কপালে চিন্তার ভাঁজ
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৫ মে, ২০২৪)
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
সর্বাধিক পঠিত
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ