X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবাযু পরিবর্তন: দুর্যোগ ঝুঁকিতে খুলনার উপকূলবর্তী ৩ লাখ মানুষ

খুলনা প্রতিনিধি
২৩ মে ২০১৬, ১৯:০০আপডেট : ২৩ মে ২০১৬, ১৯:১১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীর পাড় এভাবেই ভাঙছে জলবায়ুর অব্যাহত পরিবর্তনে সাগরবর্তী এলাকাগুলোতে নেমে আসছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর এসব দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে এ এলাকার বাসিন্দারা। গত তিন দশকে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে একাধিকবার লণ্ডভণ্ড হয়েছে সুন্দরবন। একইসঙ্গে ঝড়ের তাণ্ডবে সব হারিয়ে পথে বসেছে উপকূল ঘিরে বাস করা খুলনা জেলার কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ।

 ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকূলে প্রলংকরী সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল খুলনা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণকালের সামুদ্রিক ঝড়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরের তাণ্ডব এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার কারণে ঘটা ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস গোটা উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। এর সঙ্গে নদী ভাঙন লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে এসব এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সর্বশেষ রোয়ানু ঝড়ে খুলনায় ক্ষয়-ক্ষতি তুলনামূলক কম হলেও যা হয়েছে সেটাও বিবেচনার বাইরে রাখার সুযোগ নেই।

 বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় একদিকে যেমন সমুদ্রপৃষ্টের তলদেশ উঁচু হচ্ছে, অন্যদিকে সাগরসংশ্লিষ্ট নদ-নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে গতিপথ পাল্টাচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের পানি এখন ঢুকছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। আর এ কারণে ঘটা ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছেন  খুলনার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছার কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ।

কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপকূলীয় এলাকার ব্যাপক ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় এনে টেকসই প্রকল্প হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে।   

দাকোপের কৃষক আবুল বাশার বলেন, ভাঙ্গনের কবলে উপজেলার ৩টি পোল্ডার এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক এখানে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণ হলে ভাঙন ও দুর্যোগ ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে বলেও আশায় রয়েছেন তারা।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে সহসাই মুক্তি মেলার সম্ভাবনা নেই এসব এলাকার মানুষের। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এরইমধ্যে তারা ঘের ও ফসলি জমিতে টের পাচ্ছেন।

পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, পাইকগাছা ও কয়রাসহ এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি বোঝা যাচ্ছে ঘের ব্যবসায়। নদী ভাঙনের সময়েও এর তীব্রতা বোঝা যাচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঘেরের পানির তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে চাষকৃত মাছ যারা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তীব্র তাপদহে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাচ্ছে। আবার গরমের মধ্যেই বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা হঠাৎ করেই ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে। তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘেরের মাছের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

কয়রা উপজেলায় বাস করেন হারুণ অর রশীদ। স্থানীয় এই ব্যক্তি তাপমাত্রার এমন অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে দেখছেন প্রকৃতির আচরণে বিশাল অসামঞ্জস্যতা। তিনি বলেন, যতোই দিন যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকায় প্রকৃতির আচরণ ততোই উল্টাপাল্টা লাগছে। উপর্যুপরি নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে কৃষি জমি, বসত ভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। আবহাওয়া হচ্ছে রুক্ষ। অনেকে জমি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস কমাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু ফান্ডের অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে কাজ করছে।

ইসলামিক রিলিফের প্রকল্প ম্যানেজার সৈয়দ আবুল বাশারও মনে করেন, পরিকল্পনা মাফিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাগুলো এনজিওদের মাধ্যমে বাঁধ সংস্কার, কাঁচা রাস্তা নির্মাণ, ঝড় সহনশীল ঘর তৈরি, পয়ঃনিস্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামিক রিলিফ, সুশীলন, জেজেএস, ক্রেল, রূপান্তর, প্রদীপন, উত্তরন, সেভ দ্য চিলড্রেন, কারিতাস প্রভৃতি বেসরকারি সংস্থা দেশের উপকূলীয় মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এসব বেসরকারি সংস্থার প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ঝড় জলোচ্ছ্বাসজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে কিছুটা রেহাই পাবে বলে মনে করেন এসব সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদীর কিনার ড্যাম্পিং করে বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর কারণে নদী ভাঙন কিছুটা কমেছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে আরও উপকার পাবেন স্থানীয়রা।
আরও পড়তে পারেন:
নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী, বিএনপির একক প্রার্থী
ধর্ষণ মামলা করায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

/টিএন/আপ-এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
আগুন নেভাতে গিয়ে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ৭
আগুন নেভাতে গিয়ে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ৭
১৮ শর্তে আ.লীগকে সমাবেশের অনুমতি দিলো ডিএমপি
১৮ শর্তে আ.লীগকে সমাবেশের অনুমতি দিলো ডিএমপি
নিহত পাইলটের লাশ হস্তান্তর, থানায় মামলা
নিহত পাইলটের লাশ হস্তান্তর, থানায় মামলা
সর্বাধিক পঠিত
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
আর্জেন্টাইন ক্লাবকে জামাল ভূঁইয়ার ২ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ ফিফার
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত পাইলটের মৃত্যু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল লিখলো সওজ, চলছে সমালোচনা
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান
অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে পারমাণবিকনীতি পরিবর্তন করবে ইরান