X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমরা আঁতকে উঠে বলি ‘লাশ কেন?’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
০৬ জুন ২০১৬, ১৮:১০আপডেট : ০৬ জুন ২০১৬, ১৮:২৪

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন টহল দেওয়ার নামে ট্রলারে ৭ জনের লাশ তোলা হয়। লাশগুলো দেখে ‘লাশ কেন’ বলে আঁতকে উঠেছিলেন লিডিং সি ম্যান আবদুস সামাদ, নায়েক আজম আলী ও আবদুর রাজ্জাক। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা এ তথ্য জানান।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে অপহরণ ও পরে লাশ ট্রলারে করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়ার প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এ সময় তারা বারবার আঁতকে ওঠেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে গ্রেপ্তারকৃত নূর হোসেনসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে ওই ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে ৬৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।
শুনানী শেষে আগামী ১৩ জুন পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার সাত খুনের ঘটনায় ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। তারা হলেন খাগড়াছড়িতে অবস্থিত র‌্যাবের মেজর সুরুজ মিয়া (সাত খুনের সময়ে র‌্যাব-১১ নরসিংদি ক্যাম্পে ছিলেন), র‌্যাব-১১ এর ডিএডি আবদুস সালাম শিকদার, র‌্যাব-১১ এর লিডিং সি ম্যান আবদুস সামাদ, নায়েক আজম আলী ও আবদুর রাজ্জাক।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গেছে, র‌্যাব-১১ এর ডিএডি আবদুস সালাম শিকদার আদালতকে জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি সড়কে টহল ডিউটিতে ছিলেন। সকাল ১১টার দিকে তাকে মেজর আরিফ নির্দেশ দেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে চেকপোস্ট বসাতে এবং গাড়ি তল্লাশি শুরু করতে। সে মোতাবেক আমরা তল্লাশি শুরু করি। দুপুরে মেজর আরিফ আবারও ফোন দিয়ে জানান, লিংক রোড দিয়ে সাইনবোর্ডগামী সাদা ও কালো রঙের দুটি প্রাইভেটকার যাবে সেগুলো যেন আটকানো হয়। নির্দেশ মোতাবেক আমরা ওই দুটি প্রাইভেটকার আটকানোর আগেই মেজর আরিফ হোসেন ও কমাণ্ডার এম এম রানাকে বহন করা দুটি গাড়ি ওই কালো ও সাদা প্রাইভেটকারের সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। তখন দুটি গাড়ি থেকে সাত জনকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে একটি নীল রঙয়ের হাইএস গাড়িতে ওঠানো হয়। পরে গাড়িটি সাইনবোর্ডের দিকে চলে যায়।

আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ারে সময় লিডিং সি ম্যান আবদুস সামাদ, নায়েক আজম আলী ও আবদুর রাজ্জাক জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকাতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর ক্যাম্পে ছিলেন। আর এ ক্যাম্পের ইনচার্জ তথা দায়িত্বে ছিলেন এম এম রানা (র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো নৌ বাহিনীর কমান্ডার)। ২৭ এপ্রিল সাতজনকে অপহরণের পর রাতে তাদের জানানো হয় ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে কাঁচপুর যেতে। নির্দেশ মোতাবেক তারা কাঁচপুর যান। ট্রলার চালান নায়েক আজম আলী। ট্রলারটি কাঁচপুর সেতুর নিচে যাওয়ার পর সেখানে মেজর আরিফসহ আরও অনেকেই ছিলেন। আমাদের ট্রলারে ৭ জনের লাশ তোলার সময় আমরা তিনজন আঁতকে উঠি। তখন অফিসারদের বলি, ‘লাশ কেন? স্যার আমাদের তো টহল দেওয়ার কথা। লাশ তো বহনের কথা না।’ তখন আমরা লাশ বহনে কিছুটা আপত্তি করলে আরিফ হোসেন (র‌্যাব-১১ এর সাবেক উপ অধিনায়ক ও ইতোমধ্যে অবসরে পাঠানো সেনাবাহিনীর মেজর) আমাদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘এই ব্যাটা চুপ থাক। আমি যা নির্দেশ দেই তাই কর।’ পরে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে ৭ জনের মৃতদেহ শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর মোহনাতে নিয়ে ফেলে আসা হয়।

সাক্ষ্য দেওয়া অপর দুইজনের মধ্যে মেজর সুরুজ জানান, তিনি নরসিংদী ক্যাম্পে থাকার সময়ে নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য গিয়ে খাবারের জন্য দুই হাজার টাকা চেয়ে নেন। পরে তিনি সাত খুনের বিষয়গুলো জানতে পারেন।

জানা গেছে, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল হলেন নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা ও অপর বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি হলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী।

দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী ১২৭ জন করে। এ কারণে উভয় মামলার সাক্ষীদের একই সঙ্গে দুই মামলায় জেরা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয় জনের ও ১ মে এক জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনও ১২ জন পলাতক।

এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
নির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
উপজেলা নির্বাচননির্দেশ উপেক্ষিত হলেও কৌশলে সফল আ.লীগ
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট