X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘ডাক্তাররা কাকে বাঁচাতে এ মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে’

কুমিল্লা প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০১৬, ০৯:০৬আপডেট : ১৪ জুন ২০১৬, ০৯:০৯

তনুর মা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহের দুদফা ময়নাতদন্ত বিতর্কিতই থেকে গেলো। দুটি ময়নাতদন্তেই তার মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর পূর্বে তার সঙ্গে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স বা যৌন সসম্পর্ক’ হয়েছিল বলে দাবি করেছেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা। এসব বক্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করেছে তনুর পরিবার।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এ রিপোর্ট মিথ্যা। রিপোর্ট যদি মিথ্যা না হয় তাহলে তদন্তকারীরা কিভাবে বলল যে আমার মেয়ের যৌন সম্পর্ক ছিলো। আমি বারবার বলেছি আমার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। আমার মেয়ের নাকে, মাথায় আঘাত ছিল। শরীরে বুটের দাগ ছিল এবং বুটের পাড়ায় পায়ের রানের মাংস থেঁতলানো ছিল। কিন্তু ডাক্তাররা কেন মৃত্যুর কারণ খুঁজে পায়নি। ডাক্তাররা কাকে রক্ষা করতে এ মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছে।’

১২ জুন প্রতিক্ষীত তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতেও তনুর মৃত্যুর কারণ পাওয়া যায়নি। ধর্ষণ হয়েছে কিনা-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. কামদা প্রসাদ বলেন, ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে। এ থেকে বিষয়টা বুঝে নিতে হবে। মৃত্যুর ১০দিন পর মরদেহ ময়নাতদন্ত করায় তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা তা শনাক্ত করতে পারেনি বোর্ড। কারণ ততদিনে তার শরীর পচে গেছে।’

শরীর পচে যাওয়ায় আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের আলামত কিভাবে পাওয়া গেলো- এমন প্রশ্নের জবাবে কামদা প্রসাদ বলেন, ‘ডিএনএ রিপোর্টসহ অন্যান্য আলামত বিবেচনা করে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়।’

মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন করতে পুলিশকে অধিকতর তদন্তসহ পারিপার্শ্বিক তদন্ত করতে পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড।

তনুর মা বলেন, ‘প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা ভুল রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তাকে বাঁচাতে দ্বিতীয় প্রতিবেদনও ভুল দেওয়া হয়। আমি মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার চাই।’

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘ময়নাতদন্তের নামে ফরেনসিক বিভাগ নানা নাটক করেছে। তারা কাল ক্ষেপন করেছে। তনুর হত্যার বিচারের দাবিতে আবারও আমরা আন্দোলনে নামবো।’

কুমিল্লা টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ বলেন, ‘প্রথম ময়নাতদন্তে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত মেলেনি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তেও হত্যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সিআইডির ডিএনএ রিপোর্টকে দেখে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের কথা বলা হয়েছে। একটি পক্ষকে বাঁচাতে সেখানে ফোর্সফুল কথাটি বলা হয়নি।’

নারী নেত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স বা যৌন সম্পর্কের কথা বলে তনুর চরিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সিআইডি সঠিক তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান বলেন, ‘তনুকে ধর্ষণ বা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’র তথ্য প্রকাশের চেয়ে আইনগতভাবে তার মৃত্যুর কারণটি খুঁজে বের করাই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের উচিত ছিল। কিন্তু মৃত্যুর কারণ বের না করে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ করার তথ্য প্রকাশ করে ফরেনসিক বিভাগ কী বুঝাতে চেয়েছেন তা সবাই অনুমান করতে পারছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মো.ইব্রাহিম বলেন, ‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও মামলার পরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে তার প্রথম ময়নাতদন্ত করেন ডা. শারমিন সুলতানা। গত ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য তনুর লাশ জেলার মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামের কবর থেকে উত্তোলন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে তনুকে হত্যা ও ধর্ষণের আলামত না থাকায় দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ফরেনসিক বিভাগ। ১৬ মে তনুর কাপড়ে ৩ পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যাওয়ার খবর সিআইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ফের আলোচনায় উঠে আসে প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সহায়ক হিসেবে ডিএনএ প্রতিবেদন পেতে ফরেনসিক বিভাগের দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পর বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ৫ জুন কুমিল্লার অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাব বেগম তনুর দাঁত, চুল, কাপড়সহ ৭টি বিষয়ের পুরো ডিএনএ প্রতিবেদনই ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। পরে ৮ জুন পুরো ডিএনএ প্রতিবেদন সিআইডি থেকে ফরেনসিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।

 আরও পড়ুন:

ধর্ষণ থেকে ‘যৌন সংসর্গ’: তনু হত্যার তদন্ত কোন পথে

মা-মেয়েকে গণধর্ষণের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে রুশ বোমা হামলায় নিহত ৩
খারকিভে রুশ বোমা হামলায় নিহত ৩
ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াত তিন দিন বন্ধ
ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াত তিন দিন বন্ধ
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
কাশ্মির সীমান্তের দুই দিকে বিপরীত দুই দৃশ্য
কাশ্মির সীমান্তের দুই দিকে বিপরীত দুই দৃশ্য
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন