X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
যশোরে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ শতাধিক নিখোঁজ

যশোরে আরও পাঁচজনের জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ

তৌহিদ জামান, যশোর
২১ জুলাই ২০১৬, ১২:১৫আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৬, ১২:৫০

যশোর যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কলেজ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ শতাধিক যুবক নিখোঁজ হয়েছে। বিভিন্ন সময় তাদের নিখোঁজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত করেছে নিখোঁজ পাঁচজন দেশের ভেতরেই আছে এবং তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যে পাঁচজনের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে তারা হলো, যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার আব্দুস সোবহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪), যশোর সদরের কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে ফজলে রাব্বী (২১), শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি এলাকার আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহেদি হাসান জিম (১৯), মনিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিমউদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২) এবং যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে রায়হান (২১)।
পুলিশের ভাষ্য, শেষোক্ত রায়হান নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরিরের কেন্দ্রীয় নেতা। প্রথম তিনজনের (মুন্না, রাব্বি, জিম) নিখোঁজের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় ডায়েরি করা আছে। নিখোঁজ নকশা নাজিমের বিষয়ে ঢাকার ভাটারা থানায় জিডি রয়েছে।

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, যশোরে মোট নিখোঁজের সংখ্যা ১১৪জন (যাদের বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে)। এরমধ্যে বেশিরভাগ বাড়ি থেকে পালিয়ে বাইরে চলে গেছে, কেউ পালিয়ে বিয়ে করেছে বা কাউকে না জানিয়ে প্রতিবেশি দেশ বা অন্যত্র চলে গেছে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখা নিশ্চিত করেছে নিখোঁজ পাঁচজন দেশের ভেতরেই আছে এবং তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ইতোমধ্যে যশোর পুলিশের পক্ষ থেকে ওই পাঁচজনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সরকার ঘোষিত আইনগত সহায়তা বা কাউন্সিলিংয়ের জন্যে, যেন তারা ভুল পথে যেতে না পারে।

পুলিশ সুপার বলেন, ইতোমধ্যে কামরুজ্জামান তুহিন ও ফজলে রাব্বীর অভিভাবকরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন- সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। 

সম্প্রতি র‌্যাব সারাদেশে ২৬২ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছে। এরমধ্যে যশোরে রয়েছেন ১৪ জন।

নিখোঁজ সবার বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দুটি ইউনয়নের কয়েকটি গ্রামে। এরা হলেন মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর এলাকার আমানউল্লাহ, কামরুল জামান ও কামাল হোসেন, চাকলা এলাকার সারাত আলী ও হাসানুর রহমান, মল্লিকপুর এলাকার ইকবাল হোসেন, খালিয়া এলাকার তহিদুল ইসলাম, পীরবক্স, তপন ও শাহআলম, কিসমত চাকলা এলাকার হাসান আলী, ফারুক হোসেন ও সুমন হোসেন এবং শৈলগ্রাম এলাকার মাসুদুর রহমান।

যশোর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মণিরামপুরে নিখোঁজ যাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে- এদের বেশিরভাগই পানিপথে মালয়েশিয়া কিংবা অন্য কোনও দেশে চলে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব ৬ এর যশোর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী আরও জানান, তদন্তের স্বার্থে কিছু গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হচ্ছে।

এর আগে জেলার আরও তিন সন্দেহভাজন বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। এরা হলো কলেজ শিক্ষক নাইমা আক্তার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাশেদ গাজী, গুলশানে হামলাকারী নিবরাস ও শোলাকিয়া হামলাকারী আবিরের সঙ্গে একই মেসে বসবাসকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকনুজ্জামান।

কলেজ শিক্ষক নাইমা আক্তার

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নাইমা আক্তার সপরিবারে নিখোঁজ রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তারা সিরিয়ায় গিয়ে ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছেন।


যশোরের কলেজ শিক্ষক নাইমা আক্তার গুলশানে রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছে জঙ্গি হামলার দুটি ঘটনা ঘটায় এ দেশি তরুণরা। যাদের সিরিয়া-ইরাকভিত্তিক আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনা দুটির পর পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা ও মিডিয়ার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশের বেশ কিছু তরুণ নিখোঁজ রয়েছে যারা আইএস বা আল কায়েদার মতো সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এবার গোটা একটি পরিবারের নিখোঁজ হওয়ার খবর মেলে। এই পরিবারের অন্যতম সদস্য এমএম কলেজের শিক্ষক নাইমা আক্তার। তার স্বামী খোন্দকার রোকনুদ্দীন একজন শিশু চিকিৎসক।
এমএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ‘বিদেশ ভ্রমণের কথা বলে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ৪৬ দিনের ছুটি নেন সহযোগী অধ্যাপক নাইমা আক্তার। ওই বছরের ২৮ আগস্ট তার ছুটি শেষ হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি।  ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর যশোর এমএম কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন নাইমা আক্তার। এর আগে তিনি রাজধানীর ইডেন কলেজে কর্মরত ছিলেন। নাইমা আক্তারের ফিরে না আসার বিষয়টি কলেজের সে সময়ের অধ্যক্ষ নমিতা রাণী বিশ্বাস শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করেন। এখন শুনছি তিনি সপরিবারে দেশ ছেড়েছেন। সম্ভবত তারা সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছেন।’
শিশু চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন (৫০) তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫), দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন (২৩) ও রামিতা রোকন (১৫), মেয়েজামাই সাদ কায়েসকে (৩০) নিয়ে সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী শিক্ষকতা করতেন যশোরে। গত বছরের ১০ অক্টোবর তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়।

যবিপ্রবি ছাত্র রাশেদ গাজী

যবিপ্রবির ছাত্র রাশেদ গাজী এ বছর জুন মাসের ২১ তারিখে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বিভাগের ছাত্র রাশেদ গাজী (২৪) নিখোঁজ হন। যশোর শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার একটি মেস থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার বাবার অভিযোগ। রাশেদ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সাতপাখিয়া গ্রামের আব্বাস গাজীর ছেলে।
এ ঘটনায় রাশেদের বাবা ২৫ জুন যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি (১৪৪৪) করেন। ছেলের সন্ধান চেয়ে তিনি সম্প্রতি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবির জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়াতুজ্জামান মুকুল জানান, সকল বিভাগে নিখোঁজ ছাত্রদের বিষয়ে অবহিত করানোর জন্যে পত্র দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে তারা জানাতে পারবেন।

রোকনুজ্জামান

৬ জুলাই জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঝিনাইদহ থেকে আটক রোকনুজ্জামান রোকন সম্পর্কে তার গ্রাম যশোরের ঝিকরগাছার লোকজন তেমন কিছু জানে না। রোকনের বাড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আইনুদ্দিনের ছেলে। গ্রামবাসী এবং তার পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রথমে নায়ড়া প্রাইমারি থেকে পড়াশোনার পর, পাশের গ্রামের উলাকোল দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন।

দাখিল পাশ করে ভর্তি হন যশোর শহরের দড়াটানা জামে মসজিদের হেফজতখানায়, সেখানে কিছুদিন পাঠ নেন। এরপর চলে যান বাড়ির পাশে শার্শার বাঁগআচড়া আলিয়া মাদ্রাসায়। এরপর বাড়ি থেকে চলে যান ঝিনাইদহে। সেখানে একটি মেসে থেকে পাশের এক মসজিদে ইমামের কাজ নেন এবং ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শংকরপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হাসমত আলী জানান, রোকনের দুই মা। বড় মায়ের ঘরে ৩ ছেলে এক মেয়ে। আর রোকনের মায়ের ৩ সন্তান। এরমধ্যে ২ ভাই এক বোন। রোকনের বড় ভাই হাদিউজ্জামান বর্তমানে ব্র্যাকে চাকরি করেন।  এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলী রায়হান জানান, রোকন দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের বাইরে থাকেন। মাঝেমাঝে বাড়িতে আসতেন। ফলে এলাকাবাসী তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানেন না।

প্রসঙ্গত, রোকনুজ্জামান ঝিনাইদহ পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের সোনালীপাড়ায় একটি মেসে জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও আবিরের সঙ্গে একই মেসে থাকতেন। আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া ঈদ জামাতে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকেসহ বাড়ির মালিক ও মালিকের ছেলেদের ধরে নিয়ে যায়।

/এইচকে/

আরও পড়ুন: ‘আমার লগ ছাড়ি দেও, আমি আল্লাহর নামে আছি’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত