X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

‘হামার টাকাও নাই, চিকিৎসাও নাই!’

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
০৫ আগস্ট ২০১৬, ২০:১৫আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৬, ২১:০৮

তারামনি ও তার শিশুটি আজও পায়নি কোনও স্বাস্থ্য সেবা

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের পাকা রাস্তায় ১৫ দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছেন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ফজলিমা। প্রতিদিনই পেটে ব্যাথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগলেও দুই সপ্তাহ ধরে কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা পাননি। টাকার অভাবে ডাক্তারের কাছে যেতেও পারছেন না। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে ফজলিমার সরল জবাব,‘হামার টাকাও নাই, চিকিৎসাও নাই!’

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলসহ বন্যাকবলিত এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে। দুর্গত এলাকার মানুষের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।

টানা দুই সপ্তাহ পানিবন্দি থাকলেও কোনও চিকিৎসা সেবা পাননি কয়েকটি গ্রামের লোকজন। পানিবন্দি থাকায় চর্ম রোগ এবং বাচ্চাদের সর্দি-জ্বর হলেও তাদের চিকিৎসায় কোনও মেডিক্যাল টিম এগিয়ে আসেনি। এমনকি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না।

বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এর সত্যতাও। সদর উপজেলার পাঁচগাছী ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক পরিবার রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। বাড়ি থেকে পানি সম্পূর্ণ নেমে না যাওয়ায় এবং বাড়ির আাঙ্গিনা ও ঘরে কাদা থাকায় তারা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। ফলে ছোট ছোট ছাউনিতেই পরিবারের সব সদস্য মিলে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।

যাত্রাপুরের চাকেন্দা খান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া  ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রভা (২০), দশ দিন ধরে স্কুলে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও পাননি স্বাস্থ্যসেবা। সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে আসায় নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তিনি।

অন্যদিকে এই আশ্রয়কেন্দ্রে আসা প্রায় ২৫টি হিন্দু পরিবারের  অর্ধশত শিশুর অনেকেই জ্বর এবং সর্দি কাশিতে ভুগলেও কোনও চিকিৎসা সেবা পায়নি।

ওষুধ বলতে পেয়েছেন শুধু পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। বাড়ি থেকে বন্যার পানি সরে যাওয়ায় হয়তো আজকালের মধ্যেই তারা বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু বয়ে নিয়ে যাওয়া এই অসুস্থতার চিকিৎসা কীভাবে হবে জানেন না তারা।

এই কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া নিবা রাণী অভিযোগ করেন, মাঝিপাড়া গ্রামের তারামনি নামে এক প্রসূতির বাচ্চা হয়েছে গত ২৮ জুলাই। ঘরে যখন হাটু পানি, তখন তার বাচ্চা হয়েছে। কিন্তু কোনও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না তারামনি ও তার নবজাতক।

নিবা রাণীর কথার জের ধরে মাঝিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, তারামনি আশ্রয় নিয়েছেন তার মামার বাড়িতে। স্যাঁতস্যাঁতে মাটির মেঝেতে রাখা ছোট একটি কাঠের চৌকির ওপর বাচ্চা নিয়ে শুয়ে আছেন তারামনি।

তারামনি বলেন, ‘সন্তান প্রসবের পর এক  সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও তারা কোনও স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এমনকি প্রসব বেদনা ওঠার পর স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।’

শুধু প্রসূতি মা নয়, দুর্গত এলাকার অন্তঃসত্ত্বা নারী, বৃদ্ধ কিংবা শিশু কেউই স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রবেশের রাস্তায় অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি ছাউনিতে একাধিক শিশু রয়েছে। যাদের প্রায় প্রত্যেকেই কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত। শিশুরা অনেকেই সর্দি জ্বর, চোখের সমস্যা ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। তাদেরও একই অভিযোগ, তারা সরকারি চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।

শিশু সুমনা (৯ মাস) ভুগছে চোখের সমস্যায়। তার বাবা শাহজাহান বলেন, ‘আমি সবজির ব্যবসায়ী। বন্যায় সবজি নষ্ট হওয়ায় এখন ব্যবসা নাই। খাবার কেনার টাকাও নাই। বাচ্চার ওষুধ কিনবো কি দিয়া। মাইয়া আমার চোখের ব্যাথায় খালি কান্দে।’

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে এ পর্যন্ত একদিন মেডিক্যাল টিম কাজ করেছে তাও এক সপ্তাহ আগে। এখন আমার ইউনিয়নে বন্যা কবলিত অনেক মানুষ রোগাক্রান্ত হলেও কোনও মেডিক্যাল টিম কাজ করছে না।

অভিযোগ স্বীকার করে কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় আমাদের ৮৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। তবে তাদের অধিকাংশ চর ও দ্বীপ চরে কাজ করায় নদীর এপারের বন্যা দুর্গতদের অনেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। আমি এখনই সংশ্লিষ্ট এলাকার টিমকে বলে দিচ্ছি যেনো সেখানে দ্রুত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়।’

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী বন্যাকবলিত এলাকায় লোকজন ইতোমধ্যে ডায়রিয়া, চর্ম রোগ এবং চোখের প্রদাহে আক্রান্ত  হচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

/এনএস/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

ছাত্রলীগের ছয় টেন্ডারবাজ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৯
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৯
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
তিন মাঠে সাকিব, মোসাদ্দেক, জাকিরের তাণ্ডব
তিন মাঠে সাকিব, মোসাদ্দেক, জাকিরের তাণ্ডব
খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতির
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ