X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকৃতি চান মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৪:৪১আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৫১

ভিক্ষা করছেন মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী (৭০)। যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজের পতাকা। জাতি ও তিনি পেয়েছেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছরে কী পেয়েছেন মুরাদ আলী? এমন প্রশ্নই যেন তার মনে ঘুরে ফিরে উঁকি দেয়। কারণ স্বাধীনতা পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলীর। তাই প্রাপ্তিগুলোকে ছাপিয়ে জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো বড় বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে তার।

অস্ত্র হাতে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে দারিদ্র্যের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে পরাস্ত মুরাদ আলী। শেষ জীবনে এসে তাই সম্মানজনক রোজগারের সব পথ বন্ধ হওয়ায় বেছে নিয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মুরাদ আলীর শরীরে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ। বর্তমানে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত, দৃষ্টিশক্তিও কমেছে তার। তবুও জীবন আর জীবিকার তাগিদে ছুটে বেড়াতে হয় তাকে। কখনও স্বীকৃতি আবার কখনও পেটের দায়ে ছুঁটতে ছুঁটতে হাঁপিয়ে উঠেছেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার অঞ্জনগাছী গ্রামের স্থানীয় মুরাদ আলী, আজগর, পিয়ার, নূর হোসেন, ইনতাজ, ইয়াকুব, সাদেক, আবুল, আইনাল, মনছুর, শের আলীসহ আরও কয়েকজন যুবক স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তারা কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আনছার ক্যাম্পের কমান্ডার তাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুরাদ আলীকে তার অধীনে থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন মর্মে একটি লিখিত সুপারিশপত্রও দিয়েছেন আনছার কমান্ডার তাবিবুর রহমান। দেশ স্বাধীন হলে সহযোদ্ধাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পেলেও বাদ পড়েন মুরাদ আলী। নাম তালিকাভুক্ত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দফতরে অসংখ্যবার আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন।  এক পর্যায়ে চার বছর আগে আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মুরাদ আলী। চিকিৎসায় সে যাত্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলেও শরীরের ডান পাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়।

এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। হতদরিদ্র হওয়ায় এমনিতেই সংসারে যখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা, তার সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ। একদিকে চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে সংসারের খরচ বহন করতে নির্মম বাস্তবতার মুখে তাকে বেছে নিতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি। গত চার বছরের বেশি সময় ধরে মুরাদ আলী প্যারালাইজড শরীর নিয়ে নিজে ভিক্ষা করেছেন। প্রতিদিন যা পেতেন তা দিয়েই স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলের সংসার চালাতেন। সম্প্রতি এক প্রবাসী প্রতি মাসে তাকে আর্থিক সহায়তা করলে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবেদন করেও মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়পত্র বা গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলীর। সে কারণে সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা পান না তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাত্তরে দেশের টানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে সম্মুখযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছি। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে হায়েনামুক্ত করেছি। তবে যুদ্ধ-পরবর্তী জীবনযুদ্ধে আজ আমি  পরাজিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘বয়সের কারণে আর আগের মতো কাজ করতে পারি না। একটু হাঁটতেই হাঁপিয়ে ওঠি। আমি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত এবং আমার দৃষ্টিশক্তিও অনেক কমেছে।’

একই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, আরজুল হক ও ছাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুরাদ আলী সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে তিনি অস্ত্রও জমা দেন।’

মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার নজরুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুরাদ আলী প্রকৃতই একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। আশা করছি সরকার দ্রুতই তার নাম তালিকাভুক্ত করবে।’

তিনি আরও  বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর করার পর তার ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছি। সেই সঙ্গে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা থেকে তাকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
সর্বাধিক পঠিত
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই