সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ১২ম মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি)। ২০০৫ সালের এই দিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় তিনিসহ ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হন। হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৯ বছর পর সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও মেলেনি বিচার।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তৎকালীন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। হামলায় আরও নিহত হন শাহ এএমএস কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। আহত হন কমপক্ষে শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার রাতেই হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে কাজ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু শুরু থেকেই মামলার স্বাভাবিক তদন্ত না হয়ে দলীয় বিবেচনায় পরিচালিত হতে থাকে।
সিআইডি’র তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ২০ মার্চ ১ম অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন খারিজ করলে ১৪ মে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করেন। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করেন।
এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে এই মামলার অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ৬ বছর পর লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল।
২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া চার্জশিটের উপর হবিগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার মূল নথি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থাকায় বিচারক রাজিব কুমার বিশ্বাস উপনথির মাধ্যমে আবেদনটি সিলেটে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্রের নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার বণিক। তিনি সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ৯ বছর পর ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে কিবরিয়া হত্যা মামলার ৩য় সম্পূরক অভিযোগপত্র নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
এরপর ২০১৫ সালের জুনে মামলাটি সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। এখন সেখানেই চলছে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহন। ইতোমধ্যে মামলায় ৪৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলাটি হবিগঞ্জ আদালতে রয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নিহতের স্বজন ও আত্মীয় স্বজনরা বিচারের মুখ দেখেনি। তাদের দাবী বর্তমান সরকারের আমলে বিচার না হলে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে কি না সন্দেহ আছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহববুর রহমান হিরু জানান, কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা বিচার পাইনি। আশা করি বর্তমান সরকার দ্রুত বিচার কার্যসম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করবে।
হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও গ্রেনেড হামলায় আহত মো. আবু জাহির বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণের ধীরগতি থাকায় মামলা বিলম্ব হচ্ছে। আশা করি বর্তমান সরকারের আমলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হবে এবং যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হবে।’
মামলার বাদী হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ খান বলেন, ‘কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বর্তমান সরকার। আশা করি শিগগিরই এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হবে।’
/এমও/
