ঘরের চাল আছে তো বেড়া নেই। আবার বেড়া আছে তো দরজা নেই। বেশিরভাগ নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। টয়লেট সমস্যাও প্রকট। দ্বীপ জেলা ভোলার সাতটি উপজেলার ১৩৪টি আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে ১০৯টির অবস্থাই এমন নাজুক। আর ২০ এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন।
অভিযোগ উঠেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অযোগ্য হওয়ায় সেখানকার বসবাসকারীরা অন্য জায়গায় চলে গেছে। বাকিগুলোতে নানা সমস্যার পরও বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে মানবেতর অবস্থায় বসবাস করছেন প্রায় ১০ হাজার পরিবার।
ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বোরহানউদ্দিন উপজেলার পদ্মা মনসা আশ্রয়ন প্রকল্পে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ২০০৪ সালে নৌবাহিনীর মাধ্যমে এটি তৈরি হয়। এখানে নারী ও শিশুসহ অন্তত দেড় হাজার মানুষ বসবাস করছে। আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা ১৫৪। তাদের জন্য নির্মিত ১২টি নলকূপের মধ্যে সচল আছে মাত্র চারটি। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য বাথরুম আছে একটি, তা-ও আবার ব্যবহারের অযোগ্য। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা। নেই নূন্যতম চিকিৎসার ব্যবস্থাও।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার পদ্মা মনসা আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা রহিমা বেগম, মো. শাহ আলম, মো. বাদশা মিয়া, মোসাম্মৎ বেগম, আলতাফ সর্দার এবং ভোলা সদরের চরগাজী আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা লোকমান হোসেন, কবির মিয়া, বিবি আয়শা জানান, তাদের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য এসব ঘরে মানবেতর অবস্থায় থাকছেন। নেই যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। অনেক আশ্রয়ন প্রকল্পে নেই শিশুদের কোনও শিক্ষার ব্যবস্থা। যেসব আশ্রয়ন মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়েছে সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধে।
নদীগর্ভে বিলীন হওয়া অন্য আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো হলো- ভোলা সদরের রামদেবপুর-১, খরকি, গনেশপুর ও কালুপুরা আশ্রয়ন, তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহির উদ্দিন, আজহারউদ্দিন, রাদিম, রবিপুর, জয়নালপুর, পদ্মা, যমুনা, করতোয়া, চর জহিরউদ্দিন শাহরুখ, আহম্মদ, ডরিনা, রংধনু ও চর জহিরউদ্দিন আশ্রয়ন, দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ নলডুগী বৈকুণ্ঠপুর ও চর মুন্সি আশ্রয়ন।
জানা গেছে, নির্মাণের পর থেকে ঘরগুলোর আর কোনও ধরনের সংস্কার হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয়নের ব্যারাক ঘরগুলো নৌবাহিনীর সার্বিক নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মাণের কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করান। এ কারণে নির্মাণের মান সন্তোষজনক না হওয়ায় কয়েক বছরের মধ্যেই এগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্বীকার করে জানান, বেশিরভাগ আশ্রয়ন প্রকল্প মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। বরাদ্দ এলেই মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ভুক্তভোগীদের দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার যেন ভোলার বসবাস অযোগ্য আশ্রয়ন ব্যারাক ঘরগুলো মেরামতের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেন।
/জেএইচ/এফএস/
আরও পড়ুন-