X
রবিবার, ১২ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতেই সমাহিত মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফ

রাজশাহী প্রতিনিধি
০২ এপ্রিল ২০১৭, ০১:২৭আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৪৮
image

রাজশাহীতেই সমাহিত মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফ

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের লাশের দাফন করা হয়েছে নগরীর হেতমখাঁ কবরস্থানে। শনিবার দুপুরে পুলিশের সহযোগিতায় রাউধার পরিবারের সদস্যরা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাজশাহী নগরীর হেতেমখাঁ কবরস্থানে রাউধার দাফন করে।

এসময় মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত, রাউধার বাবা, মা, ভাই ও চাচাতো ভাই-বোনসহ তাদের পরিবারের ১১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে জানান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানাইজার এনায়েত কবীর মিলন।

তিনি আরও জানান, দুপুর ১২টার দিকে রাউধার লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগার থেকে তারা লাশ গ্রহণ করে। পরে হেতেমখাঁ কবরস্থানের জামে মসজিদে বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে রাউধার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশা শান শাকির, রাউধার বাবা মোহাম্মাদ আথিফ, আমিনাথ মুহারমিমাথ, ভাই হাসান আথিফসহ তার পরিবারের ১১জন সদস্য, রাউধার সহপাঠি এবং পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জানাজার আগে কবরস্থানের ভেতর একটি ঘরে রাউধা আথিফকে শেষবারের মতো গোসল করানো হয়। দাফনের সময় রাউধা আথিফের মা আমিনাথ মুহারমিমাথ কবরস্থানের ভেতর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে বসানো হলে জ্ঞান ফিরে আসে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন রাউধার পরিবারের সদস্যরা।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম বলেন, শুক্রবার দুপুরে রাউধা আথিফের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। রাউধার লাশ কোথায় দাফন করা হবে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতসহ তার পরিবার।

শনিবার সকালে তার বাবা মোহাম্মাদ আথিফ জানায় তাদের পরিবারের সদস্যরা রাউধাকে রাজশাহীতে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাউধার লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে কেন তারা লাশ নিজ দেশে নিয়ে গেলেন না সে ব্যাপারে তারা কিছু জানাননি তারা।

তিনি আরও বলেন, রাউধার পরিবার মালদ্বীপ দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রাজশাহীতে দাফনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। রাউধা আথিফ

এদিকে শনিবার দুপুরে রাউধা আথিফ আত্মহত্যা করেছে বলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন শাহমুখদুম থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের একজন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে যৌন নির্যাতনসহ অন্য কিছু আলামত পাওয়া যায়নি। আর ট্যাবলেটসহ অন্য কিছু খেয়েছিল কিনা। তা ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সে ভিসেরা প্রতিবেদন আসলে তখন আরও কিছু বুঝা যাবে। তবে ফাইনালে সে আত্মহত্যার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে ময়নাতদন্তে।

ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এমদাদুল হক বর্তমানে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজে চাকরি করেন। তার দৃষ্টিতে রাউধা আথিফ কেমন ছিল জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, সে পড়তো দ্বিতীয় বর্ষে। আর আমি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে থাকি। তাই তাকে আমি পাইনি। তবে রাউধার বাবা-মার ডিভোর্স ছিল। পারিবারিক কোন্দলে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছি না অন্য কারণে করেছে বলা মুশকিল হচ্ছে। পুলিশ ও ইসলামী মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসন পৃথকভাবে তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত শেষ হলে জানা যাবে।

রাউধার বাবা ভারতে ও মা মালদ্বীপে। রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা মিডিয়ার মাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তি হয়। মিডিয়ায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন। মিডিয়া তার বাবার কাছে না মায়ের কাছে অর্থ নিয়ে জমা দেন। সেই বিষয়টা আমরা দেখি না। তবে তার টাকা ব্যাংক আকাউন্টে নিয়মিত আসতো।

গত বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে রাউধা ইসলামী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর রুমে থাকতো। রুমটা নিজের মতো করে সাজিয়ে রাখতেন। সেই রুম থেকে তার পরিবার কোনও জিনিস নিয়ে গেছে কিনা এমন বিষয়ে আব্দুল আজিজ রিয়াদ বলেন, রাউধা আথিফের পরিবার আগামীকাল (রবিবার) মালদ্বীপের উদ্দেশ্য রওনা হবে। ২০৯ রুম থেকে তার ব্যবহৃত পোষাক, বইসহ শখের ছোট জিনিসগুলো নিয়েছে তারা।

তার স্মৃতি ধরে রাখতে কোন কিছু মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে করার পরিকল্পনা আছে কিনা। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল, শোকসভা, ব্যানার করেছি। আগামীতেও ছাত্রী হোস্টেলে দোয়া মাহফিল করা হবে।

উল্লেখ, ১৯৯৬ সালে ১৮ মে জন্মগ্রহণ করেছিল মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফ। পরিবারে দুই ভাই মধ্যে একমাত্র বোন হিসেবে রাউধা আথিফ জন্মেছিল। গত বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে সে রাউধা আথিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশে জানিয়েছিল সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছার আগেই তার সহপাঠিরা ঝুলন্ত রাউধার লাশ নামিয়ে ফেলেছিল। রাউধা রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে রাউধা ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর রুমে থাকতো। তিনি মালদ্বীপের মাল এলাকার মোহাম্মাদ আথিফ এর মেয়ে। নিহত শিক্ষার্থী রাউধা আথিফ পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণেও তিনি মডেল ছিলেন। ওই সংখ্যার প্রচ্ছদেও আরও পাঁচ নারী মডেলের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাউধা।

/এমএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিখোঁজের পরদিন গর্তে মিললো দুই শিশুর মরদেহ 
নিখোঁজের পরদিন গর্তে মিললো দুই শিশুর মরদেহ 
চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা হচ্ছে: শিল্পমন্ত্রী
চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা হচ্ছে: শিল্পমন্ত্রী
সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মলিন করে দিচ্ছে: সাঈদ খোকন
সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মলিন করে দিচ্ছে: সাঈদ খোকন
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
সোনার দাম আরও বাড়লো
সোনার দাম আরও বাড়লো
আজ বিশ্ব মা দিবস
আজ বিশ্ব মা দিবস
বিবি-বাইডেনের সখ্যতায় ফাটল কি লোক দেখানো?
বিবি-বাইডেনের সখ্যতায় ফাটল কি লোক দেখানো?