রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের হত্যা মামলা সিআইডিতে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতেখায়ের আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইফতেখায়ের আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলাটির ধরন সিআইডির অন্তর্ভুক্ত মামলাগুলোর মতো। তাই এ মামলাটি থানা থেকে সিআইডিতে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজশাহীর সিআইডি রাউধার হত্যা মামলাটি নেওয়ার জন্য নগরীর শাহ মখদুম থানায় আবেদন করেছে। ওসি জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে জেনেছি, থানা থেকে এই মামলার নথিপত্র এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। দুই-একদিনের মধ্যে মামলাটি সিআইডিতে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। ইউডি মামলা নিয়মিত মামলায় টার্ন করবে। দুই মামলা একসাথে চলবে না।’
এব্যাপারে রাজশাহী সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজশাহী সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হককে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। আসমাউল হক মামলার কাগজপত্র বুঝে নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করেছেন।’
নাজমুল করিম আরও বলেন, ‘আরও আগে মামলার তদন্তভার পেলে সুবিধা হতো। তবে আমরা ইতোমধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ মামলা সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছি। এখন পর্যন্ত এতে হত্যাকাণ্ডের মতো কোনও আলামত আমরা পাইনি। আত্মহত্যা হলেও কেউ প্ররোচিত করেছে কিনা, কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখব। হত্যাকাণ্ডের মতো কোনও আলামত পাওয়া যায় কিনা, তাও আমরা দেখব। এখনই সরাসরি কোনও সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে চাই না। তদন্ত শেষেই তা বলা যাবে।’
তিনি আরও জানান, ‘রাউধা একজন জনপ্রিয় মডেল ছিলেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে বাংলাদেশর ভাবমূর্তি জড়িত। তাই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলটি তদন্ত করব।’
এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠী সিরাতকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ। মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে রাউধার মৃত্যুর ১২ দিন পর রাজশাহীর আদালতে এই মামলা দায়ের করেন তিনি। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ বাদী হয়ে আদালতে যে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন, তার কাগজপত্র হাতে পেয়েই পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে। রাজশাহীর শাহ মখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
জিল্লুর রহমান জানান, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকালে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এতে আসামি করা হয়েছে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ভারতের কাশ্মীরের অধিবাসী সিরাত পারভীন মাহমুদকে।
ওই মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিরাত পারভীন মাহমুদ। সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা না বলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, রাউধার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনও ধরনের সম্পর্ক নেই।
এদিকে, রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছে বলেই তাদের মনে হচ্ছে। শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে ও লিখিত জবানবন্দি নিয়ে তারা এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন বলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল মুকিত সরকারকে আহ্বায়ক করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
উল্লেখ, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা ঝুলন্ত রাউধার মরদেহ নামিয়ে ফেলে। গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড শনিবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণেও তিনি মডেল হয়েছিলেন। ওই সংখ্যার প্রচ্ছদে আরও পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধাও ছিলেন।
/এসএ/