X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বান্দরবানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনও অনেক পরিবার

বান্দরবান প্রতিনিধি
১৭ জুন ২০১৭, ২১:০০আপডেট : ১৭ জুন ২০১৭, ২১:১৫

বান্দরবানের একটি আশ্রয়কেন্দ্র গত কয়েকদিন ধরেই সারাদেশে প্রতিদিনই কম-বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। একই চিত্র পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও। তাই নতুন করে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি। তা উপেক্ষা করেও জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াদের কেউ কেউ ফিরতে শুরু করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে, নিজেদের বাড়িতে। তবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়েও এখনও অনেক পরিবার থেকে যাচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে শুরু করেছেন সবাই। বান্দরবানের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক পরিবার বাড়ি ফিরে যাওয়ায় আল-ফারুক, আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র এরই মধ্যে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের উপস্থিতি থাকলেও পুরুষের উপস্থিতি একেবারেই কম। উপস্থিত নারীরা জানালেন, কাজের খোঁজেই পুরুষরা বেরিয়ে গেছেন। সন্ধ্যার আগে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরবেন না।
বান্দরবানের আশ্রয়কেন্দ্রে বারান্দায় চলছে রান্না কালাঘাটার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা দিলীপ দাশ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবাই দিনের বেলায় কাজে চলে যাই। আবার রাতের বেলায় কাজ শেষে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসি। আমি আজ একটু অসুস্থ বলে কাজে যেতে পারিনি।’ একই কথা জানালেন রেনু আরা-ও। তিনি বলেন, ‘আমি আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। স্বামী সকালে উঠে কাজে চলে গেছে। সন্ধ্যায় চলে আসবে। এখন আমাদের কাজের খুব দরকার। আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি।’
এদিকে, বান্দরবানের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নানামুখী সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে আশ্রয় নেওয়াদের। থাকার জায়গার যেমন সংকট রয়েছে, তেমনি রান্নার জন্যও সুবন্দোবস্ত নেই এসব আশ্রয়কেন্দ্রে। বান্দরবান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা রাজিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাড়ি একদম মাটির নিচে ঢুকে গেছে। তাই এখানে থাকছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের বাড়ি যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এখানে থাকার কষ্ট আছে, রান্নার কষ্ট আছে। তাই অনেকেই ঝুঁকি নিয়েও চলে গেছে বাড়িতে।’
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আনোয়ারা বলেন, ‘এখানে রান্নার জন্য কোনও চুলা নাই। কাপড় রাখার কোনও জায়গা নাই। অনেকজনকে একসঙ্গে থাকতে হয়। এতে কাপড় হারিয়ে যায়, অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।’
আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যদের আসমা নামের আরেকজন বলেন, ‘আমরা এখানে কয়েকদিন ধরে আছি। এর মধ্যে প্রশাসন থেকে কিছু শুকনা খাবার, চাল ও একবার খিচুড়ি দিয়েছিল। আজ কিছুই দেয়নি। তাছাড়া আশপাশে কোনও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকায় খাবার পানি সংগ্রহ করতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।’ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এমন নানা সমস্যা থাকলেও জীবনের ঝুঁকির কারণেই পাহাড়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন না আনোয়ারা-আসমারা।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি পাহাড় ধসে বান্দরবানে কয়েকজন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে বান্দরবানের লামা, আলিকদমসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মোরার আঘাতের পর টানা বৃষ্টি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে। তবে আমাদের প্রস্তুতি ছিল। সে কারণেই আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। আমরা সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছি। আমাদের ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২২শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েই বসবাস করেন। তবে কিছু মানুষ অন্য জায়গা থেকে এসে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে থাকছেন। এটা একটা সমস্যা। আমরা পাহাড়গুলোর অবকাঠামো সংস্কার করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করছি, এ বর্ষায় যারা ঝুঁকিতে আছে তাদেরও আমরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারব।’

আরও পড়ুন-

বস্তা থেকে উদ্ধার হলেন ইউপি সদস্য!

রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও শিশুখাদ্যের সংকট

নীলফামারী-ঢাকা আন্তঃনগর ট্রেনে ছাপানো টিকিট না থাকায় যাত্রীরা বিড়ম্বনায়

আবারও বৃষ্টি: বান্দরবানের পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক