পাহাড় ধসে মৃত্যু এবং পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতেও পড়েছে। গত বছর ঈদে খাগড়াছড়িতে এক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটলেও এবার ছিল প্রায় পর্যটক শূন্য। ফলে হোটেল-মোটেল মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস আছে ১২০টি। গত বছর ঈদের দশ দিন আগ থেকে পরের দশ দিন পর্যন্ত এগুলো বুকিং দেওয়া ছিল। এসময় প্রায় এক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটেছিল। হোটেল ও মোটেল মালিকসহ এই সেক্টরের অন্য ব্যবসায়ীরা গত ঈদে আয় করেছিলেন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সম্প্রতি পাহাড় ধসে মৃত্যু ও পাহাড়ি ঢলের কারণে খাগড়াছড়িতে পর্যটক নেই বললেই চলে। যে কারণে হোটেলগুলোতে কোনও বুকিং নেই।
খাগড়াছড়ি শহরের অত্যাধুনিক হোটেল অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ তার হোটেলে গড়ে ১০০ জন থাকতে পারে উল্লেখ করে বলেন, ‘ঈদের সময় পুরো হোটেল বুকিং হলে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। ফলে ঈদের কয়দিনে ১০ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু এবছর সব খালী পড়ে আছে। স্টাফদের বেতন ভাতা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
খাগড়াছড়ি শহরের আরেক অত্যাধুনিক হোটেল গাইরিং এর মালিক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘তার হোটেলে গড়ে ১০০-১২০ জন পর্যটকের থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। গত বছর ঈদের আগে-পরে প্রায় মাস খানেক প্রচুর পর্যটক পেয়েছিলেন। সম্প্রতি পাহাড় ধসের কারণে দশ ভাগের এক ভাগ পর্যটকও নেই। গত বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করলেও এবছর গড়ে ১০ হাজার টাকাও আয় হয়নি। তার পক্ষে হোটেলের বয়সহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার উপর হোটেল করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে যে লোন নিয়েছেন, তার কিস্তির চাপ আছে। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ’
খাগড়াছড়ি শহরের হোটেল মাউন্ট ইন এর সহকারী ম্যানেজার চিংলামং মারমা বলেন, ‘পাহাড় ধসের কারণে পর্যটক আসছে না। গত বছর আমরা পর্যটকদের জায়গা দিতে পারেনি। এবার হোটেল খালি পড়ে আছে। কর্মচারীদের বেতন দেওয়া কষ্ট হয়ে পড়ছে।
খাগড়াছড়ি বয়ন টেক্সটাইলের বিক্রয় কর্মী অধরা ত্রিপুরা বলেন, ‘ঈদে তাদের দোকানে গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকার বিক্রি হয়। এবছর ৫-৭ হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি।’
শহরের সবচেয়ে ভালো খাবারের হোটেল ভাতঘরের মালিক মো.কবির হোসাইন বলেন, ‘ঈদ মৌসুমে গড়ে দেড় লাখ টাকার বেচাকেনার রেকর্ড আছে। এবার তা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রির পরিচালক সুদর্শন দত্ত বলেন, ‘প্রত্যেক ঈদে এই জেলায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়। বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু এবছর সব সেক্টরেই ক্ষতি হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম শফি বলেন, ‘খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পটে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ২০০ গাড়ি আছে। এই সেক্টরে হাজার হাজার লোক কাজ করছে। পর্যটক কম হওয়ার এর প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবার উপরই পড়বে।
খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন, ‘পাহাড় ধসের কারণে এবছর পর্যটক কম। তারপরও যারা আসছে তাদের শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পর্যটন স্পটগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন আছে।
জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড়-নদী-ঝর্ণাসহ আকর্ষনীয় অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে। বড় বড় শহরগুলোর এক একঘেয়েমি ছেড়ে যারা প্রকৃতির মাঝে বেড়াতে চায় তাদের জন্য খাগড়াছড়ি সব চেয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গা। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এ বছর পর্যটক কম।’ এই মুহূর্তে কোনও সমস্যা নেই উল্লেখ করে তিনি ভ্রমণ পিপাসুদের নির্ভয়ে খাগড়াছড়ি বেড়ানোর আমন্ত্রণ জানান।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: শ্রীপুরে নিখোঁজের ১৩ ঘণ্টা পর কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার