X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাপের বিষ রফতানি করতে চান রাজ্জাক

রাজিব বসু, পটুয়াখালী
১৩ জুলাই ২০১৭, ০৭:৫৯আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৭, ১৪:১২

ঘরের মেঝেতে পেঁচিয়ে থাকা সাপ ঘরের মেঝেতে এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। একটা আরেকটার সঙ্গে পেঁচিয়ে আছে, কোনোটি আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজের মতো। ঘরের চারপাশে বিভিন্ন আকৃতির বাক্স। সেগুলোতেও রাখা আছে সাপ। এগুলোর মধ্যে কোনটি বিষধর, কোনটির বিষ নেই। সাপ নিয়ে যাদের ভীতি আছে তারা তো বটেই, সাধারণ মানুষও ঘরটিতে ঢুকলে চমকে উঠবেন। এমন ঘরের সংখ্যা এক নয়, একাধিক। আর এসব ঘরে রয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়!
এই চিত্রটি উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর নন্দীপাড়া গ্রামে আবদুর রাজ্জাকের বাড়ির। এক সময়কার সৌদি প্রবাসী রাজ্জাক নিজের বাড়িতেই যে গড়ে তুলেছেন সাপের খামার। তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনও প্রশিক্ষণ না থাকলেও এই খামারে আছে বিষধর কিং কোবরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আড়াইশ সাপ। রাজ্জাক বলছেন, সংশ্লিষ্ট দফতর এ বিষয়ে মনোযোগী হলে সরকারিভাবে সাপের খামার গড়ে তোলা যায়। এর মাধ্যমে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে সাপের বিষ রফতানিও করা সম্ভব। তিনি নিজে বিষ রফতানির জন্য সরকারি অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
সাপ ধরছেন আব্দুর রাজ্জাক পটুয়াখালী সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নন্দিপাড়া গ্রামে বাড়ি রাজ্জাকের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজ্জাকের বাড়ির সামনের দিকেই পাকা একটি ঘরের সামনে টানানো সাইনবোর্ডে লেখা ‘বাংলাদেশ স্নেক ভেনম’। সেখানেই সাপ লালন-পালন করে চলেছেন রাজ্জাক। ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিভিন্ন আকৃতির বাক্স, আর সেগুলোতে বিভিন্ন আকৃতির সাপ। মেঝের মধ্যেও ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব সাপের অনেকগুলোই।
আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। ওই সময় দেশের অনেক তরুণকেই সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। দেশেই কিভাবে তরুণদের কর্মসংস্থান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। এসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি সাপের খামারের সন্ধান পান রাজ্জাক। তিনি ওই খামারের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছেই জানতে পারেন সাপের বিষয় রফতানি করে আয়ের সম্ভাবনার কথা। উৎসাহী হয়ে ওঠেন সাপের খামার গড়ার জন্য। সৌদিতে বসেই তিনি যোগাযোগ করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ইতিবাচক কোনও সাড়া পাননি। পরে নিজে নিজেই খামার গড়ার পরিকল্পনা করেন।
থরে থরে সাজানো বিভিন্ন আকৃতির বাক্সে রয়েছে সাপ রাজ্জাক বলেন, ‘২০০০ সালে আমি ছুটি নিয়ে দেশে এসে সাপের খামার তৈরির কাজ শুরু করি। গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে গোখরা সাপের সন্ধান পেয়ে মা গোখরাটিকে ধরে আনি। এর সঙ্গে ছিল ২৪টি ডিম। সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বাচ্চা ফোটাই। এভাবেই যাত্রা শুরু আমার খামারের।’ শুরুর দিকে পরিচর্যা না করতে পারায় কিছু বাচ্চা মারা গেলেও এখন তার খামারে প্রজননের মাধ্যমে কিং কোববার মতো বিষয়ধর সাপের জন্ম হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পঙ্খীরাজ, কেউটে, দাড়াশ, বাসুয়া, কালকুলিন, সাদা গোমা, পদ্ম গোমা, বিষঝুড়ি গোরাস প্রভৃতি প্রজাতির সাপ রয়েছে রাজ্জাকের খামারে। খামারের দেখভাল ও সন্ধান মিললে সাপ ধরে আনার জন্য নিয়োগ দিয়েছেন সাত জন শ্রমিক। তবে সাপদের খাওয়ানোর কাজটা নিজেই করে থাকেন তিনি। সপ্তাহে দুই দিন খাবার হিসেবে দেওয়া হয় ব্যাঙ, পাখি, মাছ প্রভৃতি। রাজ্জাক বলেন, ‘বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতেই সাপের পরিচর্যা করা হয়। যেমন— এগুলোকে খেতে দেওয়া হয় রাতে, কারণ সূর্যের আলোয় সাপ ঠিকমতো খেতে পারে না।’
মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাপ তিনি জানান, তার খামার থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার বিষ সংগ্রহ করা সম্ভব। সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় বিষ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারছেন না ।
কিং কোবরার প্রতিগ্রাম বিষের দাম প্রায় ১ হাজার মার্কিন ডলার জানিয়ে সাপের খামারের উদ্যোক্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি এলাকার তরুণদের কর্মসংস্থানের আশায় ১৭ বছর আগে এই খামার গড়ে তুলেছিলাম। এই খামার থেকে মাসে কয়েক কোটি টাকার বিষ সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় বিষ উৎপাদন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারছি না। এখন অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছি।’
সাপকে খাওয়াচ্ছেন রাজ্জাক ভারত, থাইল্যান্ড ও চীন সাপের বিষের অন্যতম রফতানিকারক দেশ বলে জানান রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘এসব দেশে সরকারি ও বেসরকারি সাপের খামার আছে। সেগুলো থেকে বছরে পাঁচ হাজার কেজি বিষ রফতানি হয় ইউরোপে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সাপ উৎপাদন ও লালন-পালনসহ বিষ রফতানির অনুমোদন দিলে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব হতো।’
রাজ্জাক জানান, ২০০৮ সালে সরকার এ বিষয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করলে তিনি সাপের খামার পরিচালনা ও বিষ বাজারজাতকরণের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘ওই আবেদনের সঙ্গে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুলিপিও সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু চিঠি চালাচালির পরও অনুমোদন মন্ত্রণালয়েই আটকে আছে।’

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকতা অজিত কুমার রুদ্র জানান, 'আমাদের দেশে জীববৈচিত্র্যে এমনিতেই হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই আমাদের সবার উচিত জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। সাপ জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খামারিদের সরকারি নির্দেশনা মেনে সাপ লালন পালন করা উচিত। সাপের খামার স্থাপনে আইনগত নিয়মকানুন যথাযথ হলে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হতে পারে।'

আরও পড়ুন-

স্ত্রীর যৌতুক মামলায় বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে অচল নড়াইল সদর হাসপাতাল

/জেবি/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন হাইকোর্টের
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন হাইকোর্টের
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেপ্তার
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেপ্তার
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
মহসিনকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত সাব্বির-কায়সার-বিপ্লবরা
মহসিনকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত সাব্বির-কায়সার-বিপ্লবরা
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড