দরিদ্র পরিবারে জন্ম এবং শারীরিক ক্রটি কোনও কিছুই আটকে রাখতে পারেনি আদুরি খানমের (১৭) পড়ালেখা। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে এগিয়ে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী আদুরি। মা-বাবা প্রতিবন্ধী আদুরিকে জন্মের পর থেকেই আড়াল করে রাখতেন। কিন্তু আদুরির আগ্রহ আর চেষ্টার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়। পরে তার বাবা-মা তাকে পড়ালেখার দিকে এগিয়ে দেন। আদুরি নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের পলইডাঙ্গা গ্রামের সাইকেল ও ভ্যান-রিকশা মিস্ত্রি ইকবাল মিনারের মেয়ে। আদুরি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
মা-বাবাসহ তাদের সাত সদস্যের সংসার। আদুরির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার অস্বাভাবিক হাত দু’টির কারণে অনেকেই তাকে ব্যঙ্গ করে। প্রথম দিকে এ নিয়ে কষ্ট পেলেও এখন আর কষ্ট পান না। নিয়তিকে তিনি মেনে নিয়েছেন। এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি ও পরীক্ষার ফি ২ হাজার ২০০ টাকা, দুটি বিভাগে (আইসিটি ও ইংরেজি) প্রাইভেট পড়তে প্রতি মাসে ৬০০ টাকা ছাড়াও তার আনুষঙ্গিক খরচসহ প্রতিমাসে প্রায় ৪ হাজার টাকার মত লাগে।এ টাকা কোথা থেকে আসবে তিনি জানেন না তারপরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার আলো নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে।
ক্ষুদা আর দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আদুরি প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়ে ক্লাস করেন। দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে টাকা আয় করে মেয়েকে কলেজে পড়ানোর সামর্থ্য নেই। তারপরও আদুরি প্রতিদিন কলেজে যাচ্ছেন। শিক্ষার আলোয় নিজেকে বিকশিত করতে চাচ্ছেন। তিনি লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হতে চান। শিক্ষক হয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়াতে চান। তার পড়ালেখার খরচ যোগাতে দেশের বিত্তবানদের কাছে তিনি সহযোগিতা চেয়েছেন।
আদুরির বাবা ইকবাল মিনা বলেন, ‘আদুরিকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই। ছোটবেলা থেকেই আদুরির লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকায় এখন সে কলেজে পড়ছে। সাইকেলের গ্যারেজে কাজ করে প্রতিদিন দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাই।’ তাই মেয়েকে পড়ানোর জন্য তিনি বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক বরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন,‘আদুরির পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকারি নিয়মের বাইরে তাকে যতটুকু সহায়তা করা প্রয়োজন, তা করা হবে। কেউ তার পাশে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে অসহায় মেয়েটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হতো।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: সৈয়দপুরে স্বাদু পানি উপকেন্দ্রে টেংরার নতুন জাত উদ্ভাবন