যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার কানাডার কয়েকটি বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটিসহ কানাডার বিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা ইসরায়েলকে গাজা যুদ্ধে সাহায্য করছে। এদিকে, এসব ক্যাম্প ভেঙ্গে ফেলার জন্য পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন কুইবেকের প্রিমিয়ার ফ্রাঁসোয়া লেগল্ট। বৃহস্পতিবার (২ মে) এমন আবেদন করেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পটি ভেঙে ফেলা উচিত বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করলেও বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি আইন প্রয়োগকারীরা। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
লেগল্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা চাই ক্যাম্পটি উচ্ছেদ করা হোক। পুলিশের ওপর আমাদের ভরসা আছে। তাদের কাজ করতে দিন।’
বৃহস্পতিবার মন্ট্রিলে ইসরায়েলপন্থি পাল্টা প্রতিবাদও হয়েছে। তবে উভয় পক্ষকে আলাদা রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কোনও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাউনটাউন ক্যাম্পাসেরি একটি খোলা স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। সেখানে কয়েক ডজন তাঁবুতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারী।
আয়োজকদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় তার বিনিয়োগ, ‘ইসরায়েলি বর্ণবাদ, দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনের অবৈধ বসতি স্থাপন’ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করা এবং কিছু ইসরায়েলি একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব শেষ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পিং অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা বর্ণবাদে অংশ নেয় না। এমনকি গাজায় তাদের চালানো হামলা গণহত্যা না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংলাপ করছিল’ কর্তৃপক্ষ এবং মধ্যাহ্ন পর্যন্ত ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেনি’ ক্যাম্পটি।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পের মুখপাত্র সারা রাসিখ রয়টার্সকে বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকবেন তারা।
তিনি বলেছিলেন, ‘জনসাধারণের বাধা সৃষ্টি করাই যদি আমাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর একমাত্র উপায় হয়,তবে আমরা তা করতে ইচ্ছুক।’
কিছু ইহুদি দলের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ইহুদি-বিরোধী। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়োজকরা। তারা উল্লেখ করেছেন, তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ইহুদিও রয়েছেন।
ক্যাম্প নিয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কার্যালয় তার দেওয়া মঙ্গলবারের একটি বিবৃতিকে ইঙ্গিত করে। ওই বিবৃতিতে ট্রুডো বলেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার জায়গা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা…তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কেবল নিরাপদবোধ করলেই এটি কাজ করে। এই মুহূর্তে…ইহুদি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করছে না।’
৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে,ইসরায়েলের শুরু করা নির্বিচার এই হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।