X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
১৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:৩৩আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:৩৮

 

গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট বৃষ্টিপাত না থাকলেও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পানির নিচে তলিয়ে থাকা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের দেড় লাখ মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট। এছাড়া পয়নিষ্কাশনের সমস্যাসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দেওয়ায় এসব মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে।

এদিকে করতোয়া নদীর পানির প্রবল তোড়ে গত দুদিনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৫টি পয়েন্ট ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় নতুন করে পলাশবাড়ীর কিশোরগঞ্জ, হোসেনপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত, তালুককানুপুর ও মহিমাগঞ্জসহ অন্তত ৪০ গ্রামের বাড়িঘরসহ ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আমন ধানের জমি, বিভিন্ন ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের।

এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়া-রতনপুর, কাতলামারী ও শহর রক্ষা বাঁধসহ আরও ৫টি পয়েন্ট একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ফুলছড়ির সিংড়া-রতনপুর ও শহর রক্ষায় ডেভিট কোম্পানিপাড়ার বাঁধ। এই দুই জায়গার বাঁধ যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে গেলে জেলা শহর পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিবে। এ কারণে বাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলোর লোকজনের মধ্যে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

এদিকে, পানিবন্দি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। এছাড়া পয়নিষ্কাশনের সমস্যাসহ গবাদি পশুর থাকার জায়গা ও গো-খাদ্যর সংকট তো রয়েছেই। পানির ভয়াবহতা দেখে দুর্গত এলাকার মানুষ গবাদি পশুসহ সহায়-সম্বল নিয়ে উঁচু বাঁধ ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটছেন। ফলে উঁচু বাঁধ ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রেগুলোতে লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বালাসী ঘাটের রেল লাইন, ছোট ছোট বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা। কাচা রাস্তাগুলো তলিয়ে থাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পানির কারণে চার উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৫৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।

তবে উঁচু জায়গা, বাঁধ, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়াসহ বানভাসী মানুষের অভিযোগ, চারদিকে পানির কারণে তাদের হাতে কাজকর্ম নেই। এ কারণে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে থাকায় শিশুসহ অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। কিন্তু ৬ দিন ধরে তাদের এ অবস্থা চললেও কপালে জোটেনি ত্রাণ সহায়তাসহ চিকিৎসা সেবা। এছাড়া বানভাসীদের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারায় ক্ষুদ্ধ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। তবে বন্যা দুর্গতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে মাঠ পর্যায়ে অর্ধশতাধিক মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে গাইবান্ধা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর পানি অপরিবর্তীত রয়েছে। বুধবার সকাল ৬টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া করতোয়া নদীর পানি কাটাখালি পয়েন্টে ৪৪ ও ঘাঘট নদীর পানি ব্রিজরোড পয়েন্টে ৮৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বানভাসীদের মধ্যে শুকনা খাবারসহ ত্রাণ পৌঁছানো একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ফুলছড়ি। এ উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বন্যায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িঘর স্থাপনসহ ঋণ সহায়তা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, ‘পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের সহায়তায় এসব স্থানে বালির বস্তা ফেলে মেরামতের চেষ্টা করছে। এছাড়া বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহীনির কারিগরি দলের ৮৫ সদস্য কাজ করছেন। গত দুই দিন ধরে শহর রক্ষায় ডেভিট কোম্পানি পাড়ার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের নিচের গর্ত দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়দের সহায়তা গর্ত বন্ধ করা হয়। এ কারণে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলছে।’

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ পাল বলেন, ‘দুর্গত মানুষের জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। দ্রুত বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবারসহ নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া পানিবাহিত রোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।’

/এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
‘ধর্ষণে’ অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে স্বামী পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে যুবকের পলায়ন
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সড়ক নিরাপদ করতে প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সমাধান প্রয়োজন: মেয়র আতিক
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে