সারাদেশের মতো নাটোরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার সিংড়া উপজেলার আত্রাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু শেখর রায়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আর কৃষি জমির পরিমাণ। বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে জেলার লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদি ইউনিয়নের নূরুল্লাপুর পয়েণ্টে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ (সিসিব্লক)এর ৬০ মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধ্বসে পড়েছে। তবে ক্ষতি এড়াতে শুক্রবার সকাল থেকে ওই স্থানে ১৭৫ কেজি জিও ব্লক ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু শেখর রায় জানান,‘২৪ ঘণ্টা আগে আত্রাই নদীর পানি প্রবাহ ছিল বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে। ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ সেন্টিমিটার। এর ফলে উপজেলার শেরকোল, ছাতারদিঘী, চৌগ্রাম, কলম, চামারী, ডাহিয়া ও ইটালী ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত হেক্টর জমি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘বিলের বিভিন্ন জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে ৭৩৪ হেক্টর আর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমির ধান। শুধু তাই নয়, পানিবন্দী হয়ে আছে হাজার হাজার পরিবার। এ সব পরিবার গবাদী পশু নিয়েও পড়েছে বেকায়দায়।
সিংড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আহসান জানান, এরইমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু শেখর রায়। শুক্রবার থেকে বন্যাকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে।
তিনি জানান, ত্রাণ বিতরণের জন্য ১৭২টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী অ্যাভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক শুক্রবার সকালে উপজেলার সাত পুকুরিয়া থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করবেন। তিনি আনন্দনগর ও কৃষ্ণনগর এলাকায়ও ত্রাণ বিতরণ করবেন। বাকি এলাকাগুলোতে শনিবার ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল, আধা কেজি মশুর ডাল, আধা কেজি চিরা, ২টি ওর স্যালাইনের প্যাকেট,৫টি পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট, বড় মোমবাতি ১টি ও ১টি ম্যাচ দেওয়া হবে।
অপরদিকে লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান জানান, তীর রক্ষা বাঁধের সিসিব্লক ধসে পড়লেও মূল বাঁধ ঠিক আছে। তাই কৃষি জমির কোনও ক্ষতি হয়নি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি নিয়মিত সিসি ব্লক এলাকার খোঁজ নিচ্ছেন। উপজেলার কোথাও এখনও কোনও সিসি ব্লক ধসের ঘটনা ঘটেনি। শুক্রবার নতুন করে সিসি ব্লক দেওয়া হলেও নূরুল্লাপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত তীর রক্ষা বাঁধ ধসে পড়ার যে আশঙ্কা ছিল তাও শেষ হয়ে যাবে।
/জেবি/
আরও পড়তে পারেন: ভারী বর্ষণে জলমগ্ন নোয়াখালী পৌর এলাকা, জনদুর্ভোগ চরমে