X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বানের পানিতে খাদ্য সংকট, মরছে হাঁস

হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সুনামগঞ্জ
১৮ আগস্ট ২০১৭, ১৭:০০আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ২৩:০৬

খাবারের সংকটে মারা যাচ্ছে হাঁস সুনামগঞ্জে বন্যায় খাদ্য সংকটে পড়ে অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে হাঁস। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। ফসল হারানোর পর হাঁস পালন করে কোনও রকমে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন যারা হাঁসের মড়ক দেখা দেওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামে গত সাত দিনের ব্যবধানে খাদ্য সংকটে মারা গেছে দুই হাজার ২৫০টি হাঁস।

খামারিরা জানান, হাওরের গভীর পানিতে ভাসমান পোকা মাকড় খেয়ে তাদের হাঁসগুলো কোনও রকমে বেঁচে আছে। হাওরে পানি বৃদ্ধির আগে হাঁস জলজ প্রাণি শামুক-ঝিনুক খেয়ে জীবনধারন করতো। এখন হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় হাঁসের খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পরপর দুইবার ফসলহানির ফলে খামারিদের ঘরে নিজেদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই হাঁসের খাবারের যোগান দিতে পারছেন না। প্রতিদিন হাওরের পানিতে হাঁস নিয়ে যান কিন্তু সেখানে হাঁসের কোনও খাবার নেই।

খাবারের সংকটে মারা যাচ্ছে হাঁস গত সাত দিনে লালপুর গ্রামের আব্দুল করিম, হারু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, ফরহাদ, রহমত আলী, ওয়াসিম মিয়া ও মিস্টারের দুই হাজার ২০০ হাঁস খাদ্য সংকটে পড়ে মারা গেছে। প্রতিদিন হাঁস মারা যাচ্ছে। লালপুর গ্রামের আট খামারির ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

খামারি হারু মিয়া বলেন, ‘খাদ্যের অভাবে হাঁসগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পরে এক সময় মারা যায়। খামারিদের হাঁসের ঘরে বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় হাঁস রাখার কোনও জায়গা নেই তাদের। সরকার খাদ্য সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে খামারিরা সর্বস্বান্ত হবেন।’

খাদ্য সংকটে হাঁস মরে পানিতে ভাসছে সাইফুল ইসলাম জানান, তিন দিন আগে তার খামারে বন্যার পানি প্রবেশ করে। এ সময় তিনি কচুরিপানা দিয়ে হাঁসের ঘর উঁচু করে হাঁসের থাকার ব্যবস্থা করেন। তারপর মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ৭০০ হাঁস মারা যায়। এতে তার এক লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাঁসের মৃতদেহ তারা বাড়ির পার্শ্ববর্তী খরচার হাওরে ভাসিয়ে দেন।

নুরু মিয়া বলেন, দুই বারের বন্যায় ফসলহানিতে মানুষের ঘরে ভাত নেই। এখন আবার হাঁসের মড়ক খামারিদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি সাহায্য না পেলে খামারিরা পথে বসবে।

জোছনা খাতুন বলেন, ঘরে মানুষের খাবার নেই। হাঁসের খাবার কিনে দেওয়ার টাকাও নেই। এখন হাঁস ও মানুষ কিভাবে বাঁচবে। লালপুর গ্রামে ছোট বড়ো ৮টি হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে ৫০ হাজার হাঁস রয়েছে।

খাদ্য সংকটে হাঁস মরে পানিতে ভাসছে সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মোত্তালেব হাঁসের খাদ্য সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাওর থেকে হাঁস শামুক ঝিনুক খেতো। হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় এখন সে খাদ্য আর নেই। তাই খামারিরা হাঁসকে ধান খাওয়াচ্ছেন। একটি হাঁসের যে পরিমাণ খাবার দরকার সেই পরিমাণ খাবার পাচ্ছে না। এজন্য অপুষ্টিতে ভুগছে।’ 

তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে হাঁস মারা যাওয়ার কোনও খবর তিনি জানেন না। জনবল সংকটের কারণে সব জায়গার খবরও রাখতে পারেন না।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, লালপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় ২২০০ মতো হাঁস মারা গেছে বলে শুনেছেন। হাঁস মারা যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, জেলায় দুই হাজার ৭০৭টি হাঁসের খামার রয়েছে। খামারি ও গৃহপালিত হাঁস রয়েছে  ২৫ লাখ ৫ হাজার।

/বিএল/

আরও পড়ুন:

বন্যায় রাজশাহী বিভাগে ৫৬৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া বন্ধ

গাইবান্ধায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বন্যাদুর্গত ৪ লাখ মানুষ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস