X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আসছি বলে পালিয়েছে ছেলে, কাঁদছেন রোহিঙ্গা মা

আবদুল আজিজ, কুতুপালং থেকে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৩আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪৪

রোহিঙ্গা মা আজু মেহের (ছবি: প্রতিনিধি) মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর তাড়া খেয়ে চারদিন আগে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন ৮০ বছরের আজু মেহের। আসার সময় ছেলে আর ছেলের বউ সঙ্গে ছিল। কিন্তু ক্যাম্পে পৌঁছার পরই ভিড়ের মধ্যে বৃদ্ধা মাকে কৌশলে ফেলে পালিয়ে যায় ছেলে। এরপর থেকে কেঁদেই চলেছেন মা আজু মেহের। বিদেশ বিভুঁইয়ে কিভাবে থাকবেন, কে খাওয়াবে, কে দেখবে-সেই চিন্তায় আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। তবে আশা করছেন, একদিন ছেলে তার কাছে ফিরে আসবে।

রাখাইন রাজ্যের মংডু উপজেলার ঢেঁকিবনিয়া ইউনিয়নের ফকিরাবাজার এলাকায় আজু মেহেরের বাড়ি। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে এই মায়ের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। আজু মেহের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বামী মোজাহের মিয়া মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে আব্দুল করিম আমার দেখাশুনা করতো। দুই বছর আগে স্থানীয় ইসমত খাতুনের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেই। বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতেই ছেলে ও ছেলের বউ আর আমাকে সহ্য করতে পারতো না। নানা কারণে তারা আমাকে মারধর করতো। খেতেও দিতো না ঠিকমতো।’ রোহিঙ্গা মা আজু মেহের (ছবি: প্রতিনিধি)

তিনি আরও বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমার ছেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছিল। তখন আমিও সঙ্গে আসতে চাই। নানা অজুহাতে ছেলে ও ছেলের বউ আমাকে সঙ্গে আনতে চাইছিল না। পরে অনেক কষ্টে ছেলেকে বুঝিয়ে তার সঙ্গে রওনা হই। চারদিন আগে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছাই। ক্যাম্পে এদিক-সেদিক ঘুরে কোনও আশ্রয় না পেয়ে ছেলে আব্দুল করিম ও বউ ইসমত খাতুন আমাকে একটি বস্তির দরজায় বসিয়ে রাখে। আসছি- বলে তারা চলে যায়। এরপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে আসে। ছেলে আর ফিরে আসেনি।’ ছেলের চলে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের ২৭নং বস্তির সাজেদা বেগমের কুঁড়েঘরে আশ্রয় মিলে আজু মেহেরের।

রোহিঙ্গা নারী সাজেদা বেগম বলেন,‘বিষয়টি প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মনে করেছিলাম আশ্রয় পেতেই এই বৃদ্ধা মিথ্যা বলছেন। পরে বুঝতে পারি এই হচ্ছে পৃথিবী। কয়েকদিন ধরে এই মায়ের গল্প শুনে যাচ্ছি। যতই শুনি ততই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সন্তান নিজের মাকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারে? খুব আফসোস হয় আমার। বিষয়টি স্থানীয় ব্লক মাঝিকে (সর্দার) জানানো হয়েছে। চেষ্টা করে যাচ্ছি এই লাখো রোহিঙ্গার ভিড়ে এই বৃদ্ধা নারীর দুই বেলা খাবার জোগাড়ের।’

তিনি আরও বলেন,‘বৃদ্ধা এই মা ছেলের জন্য নীরবেই কেঁদে কেঁদে রাত পার করেন। কাঁদেন ফেলে আসা বসতবাড়ি এবং হারানো দিনগুলোর কথা ভেবে। তবে কখনও ছেলেকে অভিশাপ দিতে দেখিনি। শুধু দোয়াই করেন ছেলের জন্য। এই বৃদ্ধা মায়ের বিশ্বাস ছেলে একদিন ঠিকই আসবে। তাকে মা বলে ডাকবে। নিয়ে যাবে সেই রাখাইনে নিজের বাড়িতে। সেই প্রত্যাশায় দিন কাটছে ছেলে হারানো বৃদ্ধা মা আজু মেহেরের...।’

আরও পড়ুন- রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার আর ফিরিয়ে নেবে না, ওদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে: এরশাদ

/এসটি/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আফগানদের বিশ্বকাপ দলে ৬ অলরাউন্ডার 
আফগানদের বিশ্বকাপ দলে ৬ অলরাউন্ডার 
কাজের সন্ধানে বেরিয়ে সড়কে প্রাণ গেলো শ্রমিকের
কাজের সন্ধানে বেরিয়ে সড়কে প্রাণ গেলো শ্রমিকের
৮ ঘণ্টা শ্রম ৮ ঘণ্টা বিনোদন ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম কোথায়
৮ ঘণ্টা শ্রম ৮ ঘণ্টা বিনোদন ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম কোথায়
পাকিস্তানের বোধোদয় এবং বিএনপির ‘গোস্বা’!
পাকিস্তানের বোধোদয় এবং বিএনপির ‘গোস্বা’!
সর্বাধিক পঠিত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!