জয়পুরহাটে আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের মারধরে সাইদুর রহমান নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধসহ ৯ জন আহত হয়েছে। অভিযুক্ত চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার ভোর ৪টার দিকে জেলার কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোর ৪টার দিকে কালাই থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আসাদ ও কনস্টেবল রফিক হারুঞ্জা শাহপাড়া গ্রামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার আসামি মেহেদি হাসান শাপলাকে ধরতে যায়। বাড়ির লোকজন আসামি ধরতে অসহযোগিতা করার অভিযোগ এনে শুরু থেকেই পুলিশ তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বলে তারা জানায়। পরে একটি ঘর থেকে আসামিকে ধরে নিয়ে আসার সময় আসামি মেহেদির স্ত্রী মাসুদা বেগম ও ছোট ভাই ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ফেরদৌস হোসেন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের মারপিট করে। খবর পেয়ে মেহেদির চাচা ব্যবসায়ী সাইদুর ওই বাড়িতে গিয়ে পুলিশের অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক রফিক তার মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় পুলিশ তাকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু,চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এলাকাবাসী আরও জানান, সাইদুরের মারা যাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘেরাও করে দোষী পুলিশদের শাস্তি দাবি করে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবগুলো কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা তা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে তখন ওই চার পুলিশের সঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সাজ্জাদ হোসেনসহ অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছিল। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে, পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ার শেল, ৫৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় আশরাফ আলী,আজগর আলী, তাজউদ্দিন ও শাকিল নামে চার ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে বগুড়ার শজিমেক ও জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া দুই পুলিশসহ আহত আরও পাঁচজনকে কালাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে সকাল দশটার দিকে ময়না তদন্তের জন্য সাইদুরের মরদেহ জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহেল বাকিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন ও ডা. সরদার রাশেদ মোবারক।
পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান বলেন,‘এ ঘটনায় পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শকসহ হারুঞ্জা গ্রামে আসামি ধরতে যাওয়া চার পুলিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
থানায় মামলা নেওয়া হচ্ছে না নিহতদের পরিবারের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন,‘নিহতের পরিবারের কেউ এখনও মামলা করতে আসেনি।’
জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হক বলেন,‘অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।