একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের জন্য বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এখন মাঠে। তবে প্রতিটি আসনেই দুই দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে কোনও আসনেরই একাধিক প্রার্থী না থাকায় স্বস্তিতে আছে জাতীয় পার্টি। এছাড়াও, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পাঁচটি আসনেই প্রার্থী দেবে জাসদ, সিপিবি ও জেপি। প্রার্থিতা নিয়ে জোর তৎপরতা চলছে জামায়াতেও।
সাত উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধার পাঁচটি আসন। এর মধ্যে গাইবান্ধা-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, গাইবান্ধা-২ আসনে গাইবান্ধা সদর, গাইবান্ধা-৩ আসনে সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী উপজেলা, গাইবান্ধা-৪ আসনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ও গাইবান্ধা-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত ফুলছড়ি-সাঘাটা উপজেলা।
এই পাঁচ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। প্রবীণদের তুলনায় এই জেলায় প্রার্থিতার দৌড়ে তরুণরাই এগিয়ে রয়েছেন। তাদের শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার-পোস্টার, ফেস্টুনে গ্রামগঞ্জ ও শহরের অলিগলি-রাস্তাঘাটসহ হাট-বাজার ছেয়ে গেছে। ঈদ, পূজা, ধর্মীয় সভা-সমাবেশ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা হাজির হয়ে কুশল বিনিময় ও গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এলাকার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থিতাপ্রত্যাশীরাও এখন এলাকায় এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে মনোনয়ন পেতে সবগুলো দল মিলিয়ে মাঠে আছেন কমপক্ষে অর্ধশত রাজনীতিবিদ। মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও লবিং অব্যাহত রেখেছেন তারা। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আসনগুলোর চিত্র তুলে ধরা হলো।
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ): এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ। এই আসনে আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন— প্রয়াত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফরোজা বারী; লিটনের সহধর্মিনী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ খুরশিদ জাহান স্মৃতি; সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন; জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা মাসুদা খাজা; উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম; যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম রেজা; উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজা বেগম কাকলী ও গাইবান্ধা জেলা পরিষদ সদস্য এমদাদুল হক নাদিম।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহারুল ইসলামের নাম।
এই আসনে এরই মধ্যে দলের চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের আইন ও বিচার বিষয়ক উপদেষ্টা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারিকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। তবে স্থানীয় জাপা নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন সরদারও মনোনয়ন চান আগামী নির্বাচনে।
এদিকে, জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশা ও জাসদ নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী প্রামাণিকও এই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী।
গাইবান্ধা-২ (সদর): এ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক। বর্তমান সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনির সমর্থকরা বলছেন, দল তাকেই আবার মনোনয়ন দেবে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামছুল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরহাদ আবদুল্লাহ হারুন বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহ সরোয়ার কবীর, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য অ্যাডভোকেট আশুতোষ সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক মণ্ডল, সহ-সভাপতি সুলতান আলী মণ্ডল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মানিক ঘোষ ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর জামান রিংকুও এই আসনে দলের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই আসনে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন— দলের সাবেক জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সম্পাদক আনিছুজ্জামান খাঁন বাবু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আযম আনাম, সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল আলম সাজা, জেলা জিয়া পরিষদের সদস্য সচিব খন্দকার আহাদ আহমেদ, বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ সামাদ আজাদ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাভোকেট মিজানুর রহমান মিজান।
এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রশিদ সরকার। এই আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল করিম। এছাড়া জেলা জাসদের সভাপতি শাহ শরীফুল ইসলাম বাবলু, জেলা জাসদ নেতা গোলাম মারুফ মনা ও অ্যাভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু জাসদের মনোনয়ন চান আগামী নির্বাচনে। এ আসনে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও গাইবান্ধা জেলা সভাপতি মিহির ঘোষ ও বাসদের মঞ্জুর আলম মিঠুও সম্ভব্য প্রার্থী।
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী): এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. ইউনুস আলী সরকার। আগামী নির্বাচনে তার সঙ্গে এই আসনের মনোনয়ন দৌড়ে আরও আছেন সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শাহারিয়ার খান বিপ্লব, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার, শামসুজ্জোহা প্রামাণিক রাঙ্গা, বর্তমান কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর প্রধান, সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, ডা. শাহ মো. ইয়াকুবুল আজাদ এবং অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম প্রধান।
গাইবান্ধা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন— গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ড. মো. মিজানুর রহমান মাসুম ও জিয়া পরিয়দের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাদুল্যাপুর উপজেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক।
এই আসনেও জাতীয় পার্টি এরই মধ্যে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আলহাজ মমতাজ উদ্দিন ও মঞ্জুরুল হক সাচ্ছাও সম্প্রতি দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
এদিকে, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে করিম আহমেদ পল্লব, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এম খাদেমুল ইসলাম খুদি এই আসনে নির্বাচনের জন্য কাজ করছেন। তাছাড়া, জামায়াত এই নির্বাচনে দল হিসেবে অংশ না নিলেও দলের পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ): এ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ দলের মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা অনেকেরই। তবে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন ফকু, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পাট ও বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল ইসলাম লিটনও রয়েছেন এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নের দৌড়ে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন— গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান মণ্ডল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক কবির আহম্মেদ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন, পৌর বিএনপির সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আলতাব হোসেন পাতা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম।
এই আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলা আহ্বায়ক কাজী মশিউর রহমান। আর জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থিতা চান দুই সাবেক সংসদ সদস্য— লুৎফর রহমান চৌধুরী ও আতাউর রহমান বেলাল। এছাড়া এই আসনে সিপিবি নেতা বিপ্লব কুমার চাকী এবং জেলা জামায়াতের আমির ডা. আব্দুর রহিম মিয়াও নির্বাচন করতে আগ্রহী।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি): গাইবান্ধার পাঁচটি আসনের মধ্যে এই আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, অবিভক্ত বাংলার কৃষিমন্ত্রী প্রয়াত আহমেদ হোসেন সরকারের নাতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবর রহমান নিটলও এই আসনে সরকারদলীয় মনোনয়ন চান।
এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা রোস্তম আলী মোল্লা, সাঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রাহিদুল ইসলাম রাহী ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নাজেমুল ইসলাম নয়ন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক এবং সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জুও মনোনয়ন চান নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তই তিনি মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা।
এই আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেনও দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।