X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে ফের তাণ্ডব: বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
১১ নভেম্বর ২০১৭, ১১:৩৯আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ১১:৫৪

বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সপ্তাহখানেকের মতো হত্যা-নির্যাতন বন্ধ রাখার পর ফের তাণ্ডব শুরু করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। শুক্রবারও (১০ নভেম্বর) রাখাইনের তমব্রু ও ঘুমধুম এলাকায় নতুন করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। একইভাবে রাখাইনের অন্যান্য অঞ্চলেও নতুন করে সেনাবাহিনীর অত্যাচার শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এ কারণে সীমান্তে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে। টেকনাফের নাফ নদীতে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন ধরে বাঁশের ভেলায় চড়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। নাফ নদীর বিভিন্ন জলসীমানা দিয়ে আসছে তারা। গত তিন দিনে বাঁশের ভেলায় চড়ে প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে এসেছে।

ভেলায় চড়ে নাফ নদী পার হয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন কিছুদিন বন্ধ রাখার পর ফের শুরু করেছে। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। নাফ নদীতে নৌকা পারপারের ওপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখন বাঁশের ভেলা তৈরি করে জলসীমানা পার হচ্ছে তারা। বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি)

নাফ নদী পার হয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ফাতেমা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাখাইনে সেনাবাহিনী আবার অত্যাচার শুরু করেছে। সঙ্গে রয়েছে সে দেশের উগ্রপন্থী মগরা। এ কারণে সহায়সম্বল ফেলে নাফ নদীর পাড়ে চলে আসি দুইদিন আগে। কিন্তু নদী পার হওয়ার মতো কোনও নৌকা ছিল না। তাই কয়েকজন মিলে দুইদিন ধরে বাঁশ দিয়ে ভেলা তৈরি করে। ওই ভেলায় চড়ে প্রায় ৬ ঘণ্টায় নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছি।’ বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি)

নাফ নদী পার হয়ে আসা আরেক রোহিঙ্গা আব্দুল জলিল জানান, ‘নৌকা না পেয়ে যখন বাঁশের ভেলা তৈরির চেষ্টা করছিলাম আমরা, তখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এসে আমাদের মালামালগুলো কেড়ে নিয়ে যায়। পরে অনেক কষ্টে এক ভেলায় চড়ে প্রায় ৬২ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসি।’

শফিউল করিম নামের এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, 'রাখাইনে যে কটি বাড়ি-ঘর অক্ষত ছিল এখন সেগুলোও জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযানের নামে নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে নিরীহ মানুষকে। তাই আমরা পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে।’ বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি)

গত তিন দিনে যারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তারা প্রায় সবাই নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের জারিয়াপাড়া হয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। নৌকা সংকটের কারণে প্লাস্টিকের জারিকেন, কাঠ, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে ৮০০ থেকে এক হাজার বর্গফুটের ভেলা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসছে।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি রোহিঙ্গা সংকটের পর বেশকিছু মাছধরার নৌকা অর্থের বিনিময়ে ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে এনেছে। মাঝখানে নানা কারণে ডুবে গেছে রোহিঙ্গা বোঝাই ২৮টি নৌকা। ফলে গত আড়াই মাসে সলিলসমাধি হয়েছে দুই শতাধিক রোহিঙ্গার। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে  নৌকার মালিক, মাঝি ও দালালসহ ৪৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। সাজার ভয় ও সীমান্ত প্রহরীদের কড়া পাহারার কারণে এখন নাফ নদী ও সাগরের টেকনাফ অংশে বোট নামা এক রকম বন্ধই রয়েছে। এ কারণে কৌশলে ভেলা বানিয়ে রোহিঙ্গারা নাফনদী পার হচ্ছে। ভেলা আসা শুরু হওয়ার পর কিছু নৌকা রাতের আঁধারে রোহিঙ্গা নিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। তাদের রুখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এখন আবার সোচ্চার হয়েছে।’ বাঁশের ভেলায় চড়ে নাফ পার হচ্ছে রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি)

টেকনাফ ২নং বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা নৌকা সংকটের কারণে প্লাস্টিকের জারিকেন, কাঠ, বাঁশ ও দড়ি দিয়ে ৮০০ থেকে এক হাজার বর্গফুটের ভেলা তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। গত বুধবার একটি ভেলায় চড়ে ৫২ জন, বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি ভেলায় ১৩২ জন ও শুক্রবার পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা নিরাপদে বাংলাদেশের তীরে ভিড়েছে।’ ভেলায় চড়ে টেকনাফে আসা রোহিঙ্গারা (ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি)

তিনি আরও বলেন, ‘নাফ নদীর বিশাল অংশ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে যেকোনও সময় ভেলা উল্টে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি নিয়মবর্হিভূতভাবে জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকলেও মানবিকতার কারণে বিজিবি তাদের উদ্ধার করে একটি স্থানে জড়ো করে। খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে বালুখালী ক্যাম্পে উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের পাঠানো হয়। এভাবে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনও ধরণের মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা তা দেখতে ক্যাম্পে পাঠানোর আগে তল্লাশি করা হচ্ছে। পরে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

আরও পড়ুন- ভেলায় চড়ে তিন দিনে এসেছে ৫০০ রোহিঙ্গা

/এফএস/
সম্পর্কিত
১২ ঘণ্টার মাথায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরেক যুবককে হত্যা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে হত্যা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী