রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ বিষয়ে স্থানীয় বেশিরভাগ নেতা এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বাকিরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে নিয়ে রসিক নির্বাচনে দলের সবাই ঝন্টুর পক্ষে কাজ করবেন।
শনিবার (১১ নভেম্বর) রাতে গণভবনে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুর নাম ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘নেত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তার সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশ মেনে নিয়েছি।’
মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলও। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঝন্টুকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাদেরকে একসঙ্গে তার পক্ষে কাজ করার কথা বলেছেন। আমরা নেত্রীর নির্দেশ অবশ্যই পালন করবো। ঝন্টুকে মেয়র পদে জয়ী করার জন্য কাজ করবো।’
মহানগর সভাপতি ও মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী শাফিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝন্টু সাহেবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’ এর বাইরে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীমোসাদ্দেক হোসেন বাবলুসহ কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া জানতে তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর মোবাইল ফোনে কল করলে তিনিও রিসিভ করেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষনেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত ছিল। মেয়র পদে দু’জন নারী- রোজি রহমান ও লতিফা শওকতসহ মোট ১৭ ব্যক্তি তাদের জীবন বৃত্তান্তসহ আবেদন করেছিলেন। নাম ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয় । এক ঘণ্টার সভা শেষে সব প্রার্থীকে ডাকা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি এমন একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন, যার পক্ষে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় উপস্থিত সব প্রার্থী একবাক্যে তিনি যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করে প্রার্থীকে জয়ী করার চেষ্টা করবেন বলে জানান। সবার কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ঝন্টুর নাম ঘোষণা করেন। এ সময় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকান। পরে শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে নিয়ে বের হয়ে আসেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘নেত্রীর আদেশ মানতেই হবে। সবাই মিলে কাজ করে ঝন্টুর বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।’ এর বাইরে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
মেয়র পদে ঝন্টুর নাম ঘোষণার পর রংপুরে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের কোনও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এখবর লেখা পর্যন্ত (রাত পৌনে ১০টা) নগরীতে কোনও আনন্দ মিছিল বের হতেও দেখা যায়নি। মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান মেয়র ঝন্টুর সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইলে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।