X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘অপেক্ষায় ছিলাম তোকে একটু ছুঁয়ে দেখবো বলে’

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
২৯ নভেম্বর ২০১৭, ১০:১৩আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৫৩

হাসান রহমান বাঁধন, ছবি: সংগৃহীত সাড়ে ছয় বছর আগে পড়ালেখা করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় ছেলে। এরপর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোনেই কথা হতো তার। মা অপেক্ষায় ছিলেন কবে ছেলে দেশে আসবে, কবে তাকে একটু ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু দুর্বৃত্তের গুলি কেড়ে নিল মায়ের সেই স্বপ্ন। ছেলেকে আর জড়িয়ে ধরা হলো না মায়ের। শনিবার (২৫) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ হারান এম হাসান রহমান বাঁধন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বাঁধনের মা হাসনা আরা বেগমের। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাতে ছেলের সঙ্গে কথা হয়। তার শরীর ও পড়াশোনার খবর নেই। ছেলেও আমাদের খবর নেয়। ৩১ মিনিট কথা বলার পর লাইন কেটে যায়। এরপর আবার ফোন করি। তখন ছেলেকে বলেছিলাম, সাড়ে ছয় বছর ধরে অপেক্ষা করছি তোকে একটু ছুঁয়ে দেখবো বলে।’

শনিবার (২৫) রাতে পিৎজা সরবরাহের সময় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন বাঁধন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাটলার কমিউনিটি কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট শেষ করেছেন। ডিসেম্বরে কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল তার। হাসান পড়ালেখার পাশাপাশি পিৎজা ডেলিভারির কাজ করতেন।

গাজীপুরে বাঁধনের বাড়ি বাঁধনের বাড়ি গাজীপুর মহানগরের তেলীপাড়া সেতু রোডে। তার বাবা মজিবুর রহমান ঢাকার আবেদ হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রকৌশলী। মা হাসনা আরা বেগম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল অফিসার। বাঁধনের ছোট বোন আইইউবিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে।

মা হাসনা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। বাঁধন আমাকে  যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল।অনেক জায়গায় ঘুরিয়ে দেখাবেও  বলেছিল। আরও বলেছিল, কয়েকদিন পরই আমার জন্য ৬০০ ডলার পাঠাবে। এরপর আমার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে বলে। আজ সবই স্মৃতি হয়ে গেল।’

ছেলের ছোটবেলার বন্ধু নাঈমের কাছ থেকে বাঁধনের মৃত্যুর খবর পান বলে জানান তিনি।

বাবা মজিবুর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাঁধন বিমান বানানোর প্রতি আগ্রহী ছিল। ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ‍যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায় সে।  কানসাসের উইচিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্সে যোগদানের উদ্দেশ্যে কিছুদিন আগে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়। অক্টোবরে সেখানে তার যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে চাকরিতে যোগ দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছিল।’  

তিনি আরও  বলেন, ‘২০১১ সালের জুনে বাঁধন যুক্তরাষ্ট্রে যায়। এরপর আর দেশে আসেনি। সন্তান সুশিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করবে এমনটাই চাওয়া ছিল আমার। আজ সেই চাওয়া শেষ হয়ে গেল।বৃহস্পতিবার বাঁধনের সঙ্গে শেষ কথা হয়।টাকা-পয়সা লাগবে কিনা, শরীরের কী অবস্থা ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়।বাঁধনের কোনও শত্রু ছিল না। এমন কথা সে কখনও আমাকে বলেনি। তার সঙ্গে কারও শত্রুতা থাকারও কথা নয়।’

বাঁধনের একমাত্র বোন ভাবনা বলেন, ‘ভাইয়া আমাকে অনেক আদর করতো। কখন কী লাগবে সবসময় জিজ্ঞেস করতো।’

প্রতিবেশী আবুল হাশেম বলেন, বাঁধন শান্ত ও বিনয়ী স্বভাবের ছিল। সবাইকে শ্রদ্ধা করতো। তার এমন মৃত্যুতে আমরা সবাই ব্যথিত।

 

 

 

/এআর/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
‘জার্মানির তৃতীয় বিভাগের ক্লাবের সঙ্গেও বাংলাদেশকে মেলানো যায় না’
তোরণ ও ব্যানার টানিয়ে জরিমানা গুনলেন তিন প্রার্থী
তোরণ ও ব্যানার টানিয়ে জরিমানা গুনলেন তিন প্রার্থী
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
নীরবে মামুনুল হক,  শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
নীরবে মামুনুল হক, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক