X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মৌ চাষে মামুনের ভাগ্যবদল

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ০৭:৫৫আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:০৮

মৌচাক হাতে মামুন (ছবি- প্রতিনিধি)

অনেকটা শখের বশেই বছর বিশেক আগে মৌ চাষ শুরু করেছিলেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ ছিল না, তবে বইপত্র ঘেঁটে মৌ চাষ ও খাঁটি মধু সংগ্রহের কলা-কৌশল জেনে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর জমানো দুই হাজার ছয়শ’ টাকা দিয়ে কাঠের তৈরি ৪টি মৌ-বাক্স কিনে আনেন এবং পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেন মৌ চাষে। নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের ফলে আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে বছরে মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে প্রায় লাখ তিনেক টাকা আয় করেন তিনি।

মৌ চাষ ও মধু সংগ্রহ করে সংসারের অভাব দূরকারী এই ব্যক্তি হলেন মামুনুর রশিদ মামুন। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তার মতে, মৌমাছি পালনে একদিকে পরিবারে সচ্ছলতা আসে, অন্যদিকে মৌমাছির বিচরণে পরাগায়নের ফলে ফসলের উৎপাদনও বাড়ে।

মামুন কেবল মৌ চাষ করেন না; আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মধু সংগ্রহও করেন। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। শুধু দেশেই নয়; তার মধু অস্ট্রেলিয়ায়ও যায়।

সারিবদ্ধভাবে রাখা মৌ-বাক্স (ছবি- প্রতিনিধি)

সরেজমিনে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া ও মিরপুর উপজেলার ধুবইলে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌ-বাক্স। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব বাক্সে জমা করছে। প্রতিটি বাক্সের উপরিভাগ কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কালো পলিথিনের মোড়ক খুলে মৌ-বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে ধরে থাকা মৌচাক বের করা হচ্ছে। এরপর মধু আহরণ যন্ত্র দিয়ে চাক থেকে মধু বের করে নেওয়া হচ্ছে।

খামারের কর্মচারীরা জানান, ৭-৮ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌ-বাক্সে আছে একটি করে ‘এপিস মেলি ফেরা’ জাতের রানি মৌমাছি। রানির আকর্ষণে ২৫০ থেকে ৩০০টি পুরুষ মৌমাছি মুখে মধু নিয়ে বাক্সে প্রবেশ করে মধু জমা রেখে চলে যায়। রানিদের প্রত্যেকের শরীরের ঘ্রাণ আলাদা রকমের। এক বাক্সের মৌমাছিরা কখনো অন্য বাক্সে যায় না। ভুল করে গেলেও ওই বাক্সের মৌমাছিরা তাকে মেরে ফেলে। আর রানিদের ঘ্রাণ যাতে বাইরে না ছড়ায় সে কারণেই প্রতিটি বাক্স মোটা কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো হয়। রানি প্রতিদিন একটি করে পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে দৈহিক মিলন ঘটায়। মিলনের পর পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়।

খামারের কর্মচারীরা আরও জানান, দুই ধরনের মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা যায়। একটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বন্য মধু এবং অপরটি দেশীয় জাতের মৌ চাষ। সাধারণত বন্য মৌমাছিরা গাছের ডালে এবং বনজঙ্গলের চাকে মধু ছাড়ে। অপর দিকে দেশীয় মৌ চাষ হয় কাঠের তৈরি বাক্সের মধ্যে। মামুন দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই মধু সংগ্রহ করেন।

কর্মচারীরা জানান, মামুনের খামারে বর্তমানে দুই শতাধিক মৌ-বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বাক্সের মূল্য ৭-৮ হাজার টাকা। এই খামার থেকে বছরে প্রায় ১০ টন মধু উৎপাদন করা হয়।

মৌচাক বের করা হচ্ছে (ছবি- প্রতিনিধি)

মামুন জানান, ১৯৯৭ সালে মাত্র ৪টি মৌ-বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। এরপর ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করেন, কিন্তু চাকরির চেষ্টা না করে মৌ চাষেই মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তার খামারে ৮ জন কর্মচারী রয়েছেন, যারা সারা বছরই মধু সংগ্রহ করেন।

মামুন আরও জানান, ২০১৫-১৬ সালে ৯ টন ও ২০১৬-২০১৭ বছরে ১০ টন মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। এ বছরও একই পরিমাণ মধু পাওয়ার আশা করছেন।

তিনি জানান, বিত্তিপাড়া ও ধুবইল ছাড়া নাটোরের গুরুদাসপুর ও চলনবিল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সরিষা ফুলের মধু ছাড়া তিনি লিচু ফুলের মধু ও কালজিরা ফুলের মধু সংগ্রহ করেন।

মামুন বলেন, ‘গত বছর ৩০০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করেছি। খামার থেকে প্রতি মাসে ১০০ কেজি করে মধু অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়। গাছি সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর আমার খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। এতে আমাদের মধুর গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে।’

মৌচাক হাতে দুই কর্মচারীর সঙ্গে মামুন (ছবি- প্রতিনিধি)

সরকারিভাবে মধু বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে এবং সরকারিভাবে মৌমাছি রাখার বাক্স দেওয়া হলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হবো।’

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, মামুন মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরও অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। রমেশ চন্দ্র ঘোষ আরও বলেন, ‘আমাদের একটি প্রকল্প আছে। এটি হলো চাষি পর্যায়ে ডাল, তেল ও বীজ উৎপাদন, বিতরণ ও সংরক্ষণ প্রকল্প। এই প্রকল্প থেকে আমরা মৌ চাষিদের মৌ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এছাড়া খামার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবহন খরচ দিই। উৎপাদিত এসব মধু আমরা কৃষি বিভাগ থেকে স্থানীয়ভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। মৌ চাষিদের বাক্স দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মৌ-বাক্সও দেওয়া হবে।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নারীর মৃত্যু
খুদে ক্রিকেটারদের ৬০ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিলো প্রাইম ব্যাংক
খুদে ক্রিকেটারদের ৬০ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিলো প্রাইম ব্যাংক
মে থেকে  বাংলাদেশে ফ্লাইট শুরু করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স
মে থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট শুরু করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স
ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কী? কখন খাবেন?
ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কী? কখন খাবেন?
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু