X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভাষা আন্দোলন করার জন্য মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল’

মাজহারুল হক লিপু, মাগুরা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:১৭আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৫২

মাগুরার ভাষা সৈনিক জিয়াউল হক ও আমিনুল ইসলাম

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার কারণে তৎকালীন মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন মাগুরার ভাষাসৈনিক জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ‘যেহেতু মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তাই মুসলিম লীগ নেতারা আমাকে ভাষা আন্দোলন থেকে সরে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি, এরপর সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে মিছিলে যোগ দেই আমি।’

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন মাগুরার শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক খান জিয়াউল হক। তিনি ১৯৫০ সালে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। দেশব্যাপী ভাষা আন্দোলনের সময়  খুলনার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন তিনি। সে সময় সামনে থেকে যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তারই বন্ধু আমিনুল ইসলাম চান্দু মিয়াও আরেকজন সাহসী ভাষাসৈনিক। ভাষা আন্দোলনের সময় একসঙ্গে রাজপথে ছিলেন তারা, এমনকি একইসঙ্গে গ্রেফতারও হয়েছিলেন এই দুই বন্ধু।

বাংলা ট্রিবিউনের সাথে একান্ত আড্ডায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন অনুভূতির কথা তুলে ধরেছেন এ দুই ভাষাসৈনিক।

তৎকালীন ছাত্র নেতা জিয়াউল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যাওয়া, মুসলিম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করার কারণে পরে অনেক হয়রানি হতে হয়। মুসলিম লীগের নেতাদের এবং পুলিশের বাধার কারণে একসময় যশোরের কলেজ ছেড়ে মাগুরার নিজের বাড়িতে চলে যাই। তখনও মাগুরায় তেমন কোনও আন্দোলন শুরু হয়নি। নাসিরুল ইসলাম আবু মিয়া সংগঠিত করছিলেন এখানকার সবাইকে। আমি ও চান্দু মিয়াও তার সঙ্গে কাজ শুরু করি। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঘটনা জানতে পেরে আমরা মাগুরার সংগঠক আবু মিয়ার সঙ্গে দেখা করি। সেখান থেকেই ঠিক করা হয়, পরদিনই  মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। সেদিন সকালেই সবাই সেগুন বাগিচায় একত্রিত হই। সেখানে আবু মিয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়|  সমাবেশ শেষে আমরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে আসতেই পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্যরা নিরাপদ স্থানে সরে গেলেও আমি, জলিল খান এবং চান্দু মিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়ি। আমাদের পার্শ্ববর্তী জিআরও অফিসে বসিয়ে রাখা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হলে আমরা নোমানী ময়দানে আবারও একত্রিত হই।

৯০ বছর বয়সী খান জিয়াউল হকের প্রায় সমবয়সী বন্ধু আমিনুল ইসলাম চান্দু মিয়া সেদিনের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তখন বাম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। জিয়াউল হক মাগুরা এলে দু’বন্ধু মিলে আবু মিয়ার কাছে গেলাম। তিনি আমাদের পেয়ে খুব খুশি হলেন। ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলি চালানো হলে আমরা মিছিল সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেই। সবাইকে সংগঠিত করা শুরু করি। পরদিন একটি বিশাল মিছিল নোমানী ময়দান থেকে বের হয়। চৌরঙ্গী মোড়ে পৌঁছানো মাত্র পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাকে, খান জিয়াউল হক ও জলিল খানকে পুলিশ আটকে রাখে। বিকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় বাইরে মির্জা শওকত এবং আজিম দেওয়ান বিক্ষোভ করেন।’  

চান্দু মিয়া আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি এলেই সাংবাদিকরা আসেন, কথা বলেন, ভালোই লাগে। কিন্তু ভাষাসৈনিক হিসেবে আজ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কোনও অনুষ্ঠানে ডাক পেলাম না।’

এ প্রসঙ্গে জিয়াউল হক বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম ভাষাসৈনিকদের গুরুত্ব দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সমাহিত করা হয়, তেমনি ভাষাসৈনিকদেরও করা হোক।’ আর সঠিক ইতিহাস রক্ষার স্বার্থে ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা করা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।



 

/এএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
টানা দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে সন্ধ্যায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি