X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্বপ্নপূরণ হলো না এসিডদগ্ধ বাবলীর

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:১৭আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:৩১

ছোটবেলাতেই এসিড দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল বাবা বখতিয়ার রানা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মেহিয়া আক্তার বাবলী। স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করার। কিন্তু হঠাৎ করেই থমকে গেল সব। আর দুটি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। ফিরলেন, কিন্তু লাশ হয়ে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর শহরের বাইমহাটি এলাকার লোকমান মিয়ার ভাড়া বাড়ির একটি রুম থেকে বাবলীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মেহিয়া আক্তার বাবলী পরিবারের অভিযোগ, তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। বাবলীর মা পারুল বেগম বাদী হয়ে এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে আছিয়া আক্তার জয়া, তার মা ফাতেমা আক্তার সুমি এবং বাবলীর কথিত প্রেমিক ঢাকার ওয়ারি থানার হৃদয়কে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

বাবলীর মা পারুল বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জয়া ও জয়ার মায়ের সঙ্গে বাবলী মির্জাপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তারা বাবলীকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতো। নির্যাতনের বিষয়টি আমাকে ফোনে জানিয়েছিল বাবলী। আমার মেয়েকে ওরাই মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি বিচার চাই।’

বাবলীর নানী ময়না বেগম বলেন, ‘আমার নানু ছিল শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। সবসময় হাসিখুশিতে থাকতো। আমার নানু আত্মহত্যা করতে পারে না। ওরা আমার নানুকে হত্যা করেছে। আমি ওদের বিচার চাই।’

স্বজনরা জানান, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মেহিয়া আক্তার বাবলী জন্মগ্রহণ করে ঢাকার সায়েদাবাদে। তার বাবার নাম বখতিয়ার রানা ও মা পারুল বেগম। বাবলীর বয়স যখন ৬ মাস তখন তার মুখ, কান, পা ও পায়ুপথে পাঁচদিন এসিড ঢেলেছিলেন তার বাবা। এ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন বাবলী। কিন্তু এসিডে বাবলীর একটি কান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় গলা, জিহ্বা ও মুখ।

এ ঘটনায় বাবলীর বাবার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি গাঢাকা দেন। এরপর বাবলীর মা তার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই সময় এসিডদগ্ধের ঘটনায় বাবলীর পরিবারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে বাংলাদেশ এডিস সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাবলী। ভর্তি হয়েছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসে। সেখানে হোস্টেলেই থাকতো বাবলী।

তবে বাইরে থেকে লেখাপড়ার সুযোগ দিয়ে ভারতেশ্বরী হোমস থেকে গত বছরের রমজান মাসে বের করে দেওয়া হয় বাবলী ও তার বান্ধবী আছিয়া আক্তার জয়াকে। একই প্রতিষ্ঠানে ও একই শ্রেণিতে পড়াশোনার কারণে আছিয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বাবলীর মায়ের। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বাবলীর মা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর শহরের বাইমহাটি এলাকার লোকমান মিয়ার বিল্ডিংয়ে একটি রুম ভাড়া নেন। ভাড়া বেশি হওয়ায় বাবলীর বান্ধবী জয়ার মা ফাতেমা আক্তার সুমি অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার শর্তে একই রুমে ওঠেন। সেখানে জয়া ও তার মায়ের সঙ্গে বাবলী একাই থাকতেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ভাড়া বাড়ি থেকে বাবলীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, ‘ঝুলন্ত অবস্থায় বাবলীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে বাবলীর মা পারুল বেগম বাদী হয়ে ৩ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এরইমধ্যে জয়ার মা ফাতেমা আক্তারকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’

মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা হালদার বলেন, ‘বাবলী ও জয়ার বিরুদ্ধে হোমস হোস্টেলের নিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিভিন্ন অভিযোগের কারণে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ রেখে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তার আত্মহত্যার বিষয়টি দুঃখজনক।’

/এমও/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?