১৯৭১ সালে মো. সিদ্দিক মিয়ার বয়স ছিল ১১ বছর। তার বড় ভাই আইনাল হকের ১৫ বছর। তাদের বাবা আইয়ুব আলী ফকির ছিলেন কলেজের পিয়ন। তাকে আল বদররা নির্যাতন করে হত্যা করে সরকারি আশেক মাহমুদ ডিগ্রি কলেজ হোস্টেলের পেছনের একটি ইঁদারায় ফেলে দিয়েছিল। সেই নির্যাতন- হত্যার কাহিনী এখনো মনে আছে তাদের। ওই হোস্টেলের পাশেই এখন বাস করেন তিনি।
দুই ভাই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলিতে জামালপুর শহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তাদের দোসর আল-বদর, রাজাকার ও আল-শামস্ বাহিনী মুক্তিকামী শত শত মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পিছিয়ে ছিল না শান্তি বাহিনীও। তাদের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে। জামালপুর শহরে মুক্তিকামী মানুষদের নির্যাতন করার জন্য আলবদর ও রাজাকারদের ছিল দুইটি টর্চার সেল। একটি বর্তমান সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল এবং অপরটি শহরের মেডিক্যাল রোডের সাধনা ঔষধালয় ভবন। এই ভবনটি শান্তি কমিটির অফিস হিসেবেও ব্যবহার হতো। এই অফিসের পেছনের একটি কক্ষে চলতো পাশবিক নির্যাতন। এছাড়া বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন পুরাতন ওয়াপদা ভবনটি ছিল পাক হানাদার বাহিনীর কার্যালয় ও বাসস্থান। পাশে বর্তমান কর্মচারীদের কোয়ার্টারগুলো ছিল তাদের টর্চার সেল। এছাড়া শহরে ছিল দুইটি বধ্যভূমি। একটি বর্তমানে ফৌতি গোরস্থান এবং অপরটি বানিয়া বাজারের ব্রম্মপুত্র নদের তীরবর্তী মহাশ্মশান ঘাট। টর্চার সেলে দুই/ তিন দিন শারীরিক নির্যাতনের পর এই বধ্যভূমিতে তাদের রাতের আঁধারে গলা কেটে এবং গুলি করে হত্যা করা হতো। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেলটি এখনো পরিত্যক্ত আছে। সেখানে এখন গরুর গোয়াল।’
সিদ্দিক মিয়া ও আইনাল হক বলেন, ‘এই ডিগ্রি হোস্টেলের টর্চার সেলে যাদেরকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম তার মনে আছে। যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা হলো সদর উপজেলার তিতপল্ল্যা ইউনিয়নের কামালখান গ্রামের হায়দার চেয়ারম্যান (৬০), শহরের নয়াপাড়ার সদু (৪০), বনপাড়ার আইয়ুব আলী ফকির (৬০), পৌরসভার পাথালিয়ার জেমন (২৬) ও নয়াপাড়ার ছোলে (২৮)।’
তারা জানান, ওইসব আলবদর ও রাজাকাররা হলো শহরের ইকবালপুরের বদর কমান্ডার বাহিনীর প্রধান আশরাফ, তার সহকারী কাচারীপাড়ার মান্নান, হান্নান, ইকবালপুরের খলিল, শহরের বকুলতলার জাকারিয়া ও কলেজ রোডের সামাদ।
পরবর্তীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আশরাফ, মান্নান ও শরীফের মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
মো. সিদ্দিক মিয়া ও তার বড় ভাই আয়নাল হক মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী ছিলেন।