X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুম চোখে ও বেপরোয়া গতির বাস চালাচ্ছিলেন চালক

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
২৩ জুন ২০১৮, ১৪:২১আপডেট : ২৩ জুন ২০১৮, ১৪:২১

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এবং গাছ ভেঙে বাস উলল্টে গেছে

চালক ঘুম চোখে ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে আহত যাত্রীদের অভিযোগ। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে শনিবার ভোর ৪টার দিকে যাত্রীবাহীবাস উল্টে নারী ও পুরুষসহ ১৮ জন নিহত হয়েছে। এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৮ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়েছিল বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন ।

দুর্ঘটনার পর ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দীর্ঘ চেষ্টার পর দুর্ঘটনার শিকার বাসটি সড়িয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বাসের আহত যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বাসটি ছাড়ে। প্রথম থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চালকের এই বেপরোয়া গতি দেখে অনেকেই  তাকে সাবধান করে এবং গতি কমাতে বলে। কিন্তু চালক কারও কথা না শুনেই বাসটি বেপেরায়া গতিতে চালাতে থাকে। বগুড়া পার হওয়ার পর চালক ঘুমাতে থাকে। এ দুর্ঘটনার আগেও চালক দুই-তিনবার ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায়।এরপরও চালক সাবধান হয়নি।

পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী রণি তালুকদার ও হান্নান মিয়ার অভিযোগ করে বলেন,‘বাসের ৪২ সিট ছাড়াও চালকের পিছনে ইঞ্জিন কভারে আরও ৫-৭ জন যাত্রী ছিল। এছাড়া বাসের ছাদের উপরেও ১২-১৩ জন যাত্রী ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকার পরেও বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক। দুর্ঘটনার আগে প্রচণ্ড গতির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বাসটি উল্টে খাদে পড়ে যায়। আমাদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

গাইবন্ধায় বাস দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীরা

গরু ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন,‘আমরা এক সঙ্গে ১৩ জন গরু ব্যবসায়ী বাসের ছাদের উঠে গরু কেনার জন্য দিনাজপুর যাচ্ছিলাম। বাসটি ছাড়ার পর থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিল। বারবার তাকে সাবধান করা পরও চালক কারও কোনও কথাই শোনেনি। দুর্ঘটনার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। আমি হাত-পা ও মাথায় আঘাত পেয়েছি।’ 

গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী থাকার পরেও চালক বেপরোয়া গতিতেই বাসটি চলাচ্ছিল। এ কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি বড় গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। বাসের ধাক্কায় গাছটিও উপড়ে পড়ে এবং বাসটি গাছের উপর দিয়ে উল্টে খাদে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসটির দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ রংপুর ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যা কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল আলম বলেন,‘  চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ কবীর বলেন, ‘ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৭ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা গেছেন। এছাড়া শিশুসহ আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় পাওয়া গেলে পরিবারে কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চালকের বেপরোয়া গতির কারণে এ দূর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দূর্ঘটনার বিষয়টি আরও তদন্ত করা হবে। তদন্তে দুর্ঘটনার আরও কোন কারণ থাকলে তাও বেরিয়ে আসবে’।

পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল জলিল বলেন,‘আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত ১২ জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩-৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সরকার ও পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন,‘দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে।’

এরআগে, গত ১০ মার্চ রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের দক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও জুনদহ এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছিল। ওই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের অসাবধনতাকেই দায়ি করেন পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

 

/জেবি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার ভারতের দাবাড়ুর সঙ্গে বাংলাদেশের মননের ড্র
এবার ভারতের দাবাড়ুর সঙ্গে বাংলাদেশের মননের ড্র
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
মাদারীপুরে বজ্রাঘাতে ২ জনের মৃত্যু
মাদারীপুরে বজ্রাঘাতে ২ জনের মৃত্যু
শিগগিরই অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
শিগগিরই অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের