কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় নিহত আকিফার বাবা হত্যা মামলা করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু পুলিশ সেটি দুর্ঘটনার মামলা হিসেবে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) রাতে আকিফার বাবা হারুন উর রশীদ কুষ্টিয়া মডেল থানায় বাসের চালক, সুপারভাইজার ও মালিককে আসামি করে মামলাটি করেন। আকিফার বাবা দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় মামলাটি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পুলিশ দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলাটি নিয়েছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনা আইনে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। তবে আইনগত সমস্যায় মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় নেওয়া যায়নি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দণ্ডবিধির আইনের ৩০৪ এর (খ) ধারায় বলা আছে-যদি কোনও ব্যক্তি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কোনও পথচারীকে চাপা দেয়, তাহলে তিনি এই ধারায় সাজাপ্রাপ্ত হবেন। এবং চাপা দেওয়ার ফলে যদি তার মৃত্যু হয়, তাহলে তিনি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হবেন।’
শিশু আকিফা খাতুনের বাবা হারুন উর রশীদ বলেন, ‘ আমি হত্যা মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, পুলিশ নেয়নি। পিতার কোলে সন্তানের লাশ কত কষ্টের, তা আপনারা বোঝেন। আমি আমার সন্তান হারিয়েছি। আমি এর ন্যায়বিচার চাই এবং দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
উল্লেখ্য, ২৮ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় পথচারী মা-মেয়েকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে মা রিনা বেগম ও শিশু আকিফা খাতুন গুরুতর আহত হন। ঘটনাটি পাশের একটি জুয়েলারির দোকানের সিসি টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ পরিবহনের বাসটি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিল। এই সময় মা রিনা বেগম তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ওই বাসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কোনও হর্ন ছাড়াই চালক বাসটি চালিয়ে মা-মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। মাথায় আঘাত পাওয়ায় শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ওইদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ৩০ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আকিফা খাতুন কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকার খুদ্র ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদের মেয়ে।
আরও পড়ুন:
আহাজারি থামছে না আকিফার বাবার
শিশু আকিফার মৃত্যু: ঘাতক বাস জব্দ